জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। ভোটের তপশিল ঘোষণার পরপরই তার ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা রাজনৈতিক এবং সামাজিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
শিক্ষাজীবন ও প্রাথমিক কার্যক্রম
শরিফ ওসমান বিন হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। শিক্ষাজীবনের শুরু নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসা থেকে হলেও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একসময় ইংরেজি শেখার কোচিং সেন্টার ‘সাইফুরস’-এ শিক্ষকতা করেছেন এবং সর্বশেষ ‘ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস’ নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার দায়িত্বে ছিলেন।
হাদির সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জগতের সঙ্গে পরিচয় মাদ্রাসার সময় থেকেই। ভাষা ও পোশাকের কারণে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করলেও সহকর্মীরা নিশ্চিত করেছেন যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে হাদি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি মূলত সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করতেন এবং একাধিক বইও লিখেছেন।
ইনকিলাব মঞ্চ গঠন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ওসমান হাদির হাত ধরে গড়ে ওঠে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। সংগঠনটি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণকে লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে।
হাদির নেতৃত্বে সংগঠনটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয়। এবার ডাকসু নির্বাচনে ইনকিলাব মঞ্চের ফাতিমা তাসনিম জুমা নির্বাচিত হন মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
ওসমান হাদি তার তীব্র বক্তব্য এবং সাহসী ভাষণের জন্য পরিচিত। তিনি আওয়ামী লীগের নীতি ও কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করেছেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে বিশ্বের নজির হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
চলতি বছর তিনি সেনাবাহিনী, অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা এবং দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ঘাটতির সমালোচনা করেছেন এবং জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছেন।
গত নভেম্বর মাসে হাদি সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি ফোন নম্বর থেকে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তার বাড়িতে আগুন দেওয়ার হুমকি এবং পরিবারের প্রতি ভয়ংকর হুমকির কথাও উল্লেখ করেছেন। তবুও তিনি জানিয়েছিলেন, ‘জীবননাশের আশঙ্কা সত্ত্বেও ইনসাফের লড়াই থেকে পিছিয়ে যাব না।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা
সম্প্রতি হাদি ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রতি শুক্রবার জনসংযোগ এবং প্রচারণা কার্যক্রম চালাতেন।
তার সহযোদ্ধাদের বরাত দিয়ে জানা যায়, জুমার নামাজের পর মসজিদে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি ছিল। আলোচনা শেষে সবাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিলিত হয়ে দুপুরের খাবার খেতে এবং আলোচনা করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ঠিক সেই সময় হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলা ও চিকিৎসা
পুলিশ জানায়, বেলা ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় দুজন মোটরসাইকেলে করে এসে হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে এবং তার অবস্থা সংকটাপন্ন।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যরা জানাচ্ছেন, ‘হাদি ভাই রিকশায় ছিলেন। দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে করে এসে গুলি ছুড়ে চলে যায়। তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
ওসমান হাদি রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন সক্রিয়। তার সাহসী নেতৃত্ব, তীব্র বক্তব্য এবং গণতান্ত্রিক মূল্যে অবদান তাকে আলোচনার কেন্দ্রে রাখে। হামলার পর দেশের রাজনৈতিক মহলে তার নিরাপত্তা এবং নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ঘটনার পর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি অবিলম্বে এই ঘটনার দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত চালানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, যেন হামলায় জড়িত সবাইকে দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।




