সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মনিরুজ্জামান মনির, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৫:০২ পিএম

ভবন থাকলেও জনবল পর্যাপ্ত নেই, ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা

মনিরুজ্জামান মনির, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৫:০২ পিএম

৫০০ শয্যা বিশিষ্ট টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি-

৫০০ শয্যা বিশিষ্ট টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি-

৫০০ শয্যা বিশিষ্ট টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন এবং হাসপাতালের বহিঃবিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসে গড়ে প্রায় ১,৫০০ থেকে ২,০০০ রোগী। হাসপাতালের চকচকে ভবন থাকলেও নেই পর্যাপ্ত জনবল। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা, ভোগান্তিতে পড়ছেন চিকিৎসা নিতে আসা বিপুল সংখ্যক মানুষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫০০ শয্যা অনুযায়ী টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্টাফের পদসংখ্যা খুব কম। মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসক ও স্টাফদের পদসংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। এর মধ্যে চিকিৎসক প্রয়োজন ২০০ জন, কিন্তু এখানে রয়েছেন সর্বমোট ৫৫ জন। এই ৫৫ জনের মধ্যে ১ জনের পোস্ট জয়েন না করায় পদটি শূন্য রয়েছে। বাকি ৫৪ জনের মধ্যে বহিঃবিভাগে চিকিৎসা দেন ২২ জন, ইমারজেন্সিতে থাকেন ৫ জন এবং অন্তঃবিভাগে ডিউটি করেন বাকি ২৭ জন চিকিৎসক।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, নার্স প্রয়োজন ৩০০ জন, এই হাসপাতালে রয়েছেন ১৬৫ জন। পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রয়োজন ২০০ জন, কিন্তু রয়েছে ৯০ জন। নিরাপত্তা কর্মী প্রয়োজন কমপক্ষে ৬০ জন, এখানে আছে ২৮ জন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দরকার ৬৫–৭০ জন, রয়েছে মাত্র ৩৮ জন। হাসপাতালে ১৪টি ওয়ার্ড ও ৬টি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। তবে জরুরি রোগী পরিবহনের জন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবহারের জন্যও প্রয়োজনীয় কোনো গাড়ি নেই।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহিঃবিভাগে মেডিসিন, গাইনি ও প্রসূতি, সার্জারি, শিশু, চর্ম, নাক–কান–গলা, চক্ষু, দন্ত, ফিজিওথেরাপি, শিশু বিকাশ কেন্দ্র এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চালু রয়েছে। জরুরি বিভাগে আগে একদিন পরপর রোগী ভর্তি নেওয়া হলেও বর্তমানে সপ্তাহের ৭ দিনই ভর্তি নেওয়া হচ্ছে।

অন্তঃবিভাগে মেডিসিন বিভাগের তিনটি ইউনিটে বেড সংখ্যা ১১০টি, তবে অধিকাংশ সময়ই বেডসংখ্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি থাকে। গাইনি বিভাগে বেড ৪০টি এবং বিভিন্ন গাইনি অপারেশন চালু আছে। প্রসূতি বিভাগে বেড ৪০টি, এখানে স্বাভাবিক প্রসব ও সিজার অপারেশন দুটিই চালু রয়েছে। সার্জারি বিভাগে বেড ৭০টি এবং সার্জারি অপারেশন নিয়মিত চলছে। শিশু বিভাগে বেড ৫০টি।

কার্ডিওলজি বিভাগে বেড ১৮টি; ওয়ার্ড চালু থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটি ও জনবল সংকটে ক্যাথল্যাব চালু করা সম্ভব হয়নি।

নেফ্রোলজি বিভাগে বেড ১২টি; ওয়ার্ড চালু আছে, তবে ডায়ালাইসিসের ৫০টি বেড চালুর জন্য অবকাঠামো মেরামত চলমান। অর্থোপেডিক্স বিভাগে বেড ৭০টি। ডেন্টাল বিভাগে রোগী ভর্তি রাখা হয় না। আইসিইউতে বেড ১০টি, কিন্তু জনবল ও সেন্ট্রাল অক্সিজেনের অভাবে চালু নেই। হাসপাতালে ৮০টি কেবিন থাকলেও জনবল সংকটে তা চালু করা সম্ভব হয়নি।

হাসপাতালে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, ম্যামোগ্রাফি, ইসিজি, ইকো কার্ডিওগ্রাফি ও ইটিটি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও ডপলার টেস্ট চালু আছে। তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এমআরআই সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ভর্তি রোগীদের খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়, তবে অনেক রোগী খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ করেন। সাপ্লাই ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। হাসপাতাল এলাকায় দালালদের দৌরাত্ম্য বেশ; রোগী ও স্বজনরা প্রায়ই হয়রানির শিকার হন। কর্তৃপক্ষ বলছে, দালাল প্রতিরোধে প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট মাঝে মাঝেই পরিচালিত হয়।

গত অক্টোবরের শুরুতে মধ্যরাতে টাঙ্গাইল মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ডাক্তার ইসিজি করতে বলেন। হাসপাতালে ইসিজি সেবা চালু থাকায় সেখানেই করা হয়, কিন্তু মেশিনটি পরিচালনা করেন কোনো ডাক্তার বা নার্স নন—তিনি হাসপাতালের আউটসোর্সিং পরিচ্ছন্নতা কর্মী।

এ ছাড়া ৩ অক্টোবর বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নাজির জুবায়ের আল মাহমুদ রনি। হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ—সঠিক সময়ে চিকিৎসক চিকিৎসা দেননি এবং চিকিৎসক ছিলেন না। চিকিৎসা অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তর্কে জড়ান ও চিৎকার-চেঁচামেচি করেন।

টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস জানান, জনবল ঘাটতি নিয়েই হাসপাতাল চালু আছে এবং জনবল সংকটের কারণেই অর্থোপেডিক্স, আইইএনটি, আইসিইউসহ কয়েকটি ওয়ার্ড চালু করা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও জানান, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রয়োজন অনুযায়ী পদ সৃষ্টি করে লোকবল বাড়ানো হলে সব কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে এবং রোগীরা উপযুক্ত সেবা পাবেন। জনবল সৃষ্টি ও পদায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে সব ডিপার্টমেন্টই চালু করা যাবে।

Link copied!