ঠাকুরগাঁও পাক হানাদার মুক্ত দিবস আগামীকাল ৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঠাকুরগাঁও পাক হানাদারমুক্ত হয়। অত্র অঞ্চলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পাকিস্তানি সৈন্যরা পিছু হটতে শুরু করে। তাদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে এই দিনেই। দিবসটি উদযাপনে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও জেলা প্রশাসন।
ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয় একাত্তরের জুলাই মাসের প্রথম দিকে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলারা হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। তারা বেশ কিছু ব্রিজ ও কালভার্ট উড়িয়ে দেয়। নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক অভিযান চালায়। মুক্তিবাহিনীর যৌথ অভিযানে পঞ্চগড় মুক্তিবাহিনীর দখলে এলে পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়।
এরপর ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণ শুরু হয় ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে। মিত্রবাহিনী যাতে ঠাকুরগাঁও দখল করতে না পারে সে জন্য পাকসেনারা ৩০ নভেম্বর ভুল্লী ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। তারা সালন্দর এলাকায় সর্বত্র, বিশেষ করে ইক্ষু খামারে, মাইন পুঁতে রাখে। মিত্রবাহিনী ভুল্লী ব্রিজ সংস্কার করে ট্যাংক পারাপারের ব্যবস্থা করে।
১ ডিসেম্বর ভুল্লী ব্রিজ পার হলেও সর্বত্র মাইন থাকার কারণে মিত্রবাহিনী ঠাকুরগাঁও শহরে ঢুকতে পারেনি। ওই সময় শত্রুদের মাইনে দুইটি ট্যাংক ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর মাইন অপসারণ করে মিত্রবাহিনী ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে অগ্রসর হয়। ২ ডিসেম্বর সারা রাত প্রচণ্ড গোলাগুলির পর শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে। অবশেষে ৩ ডিসেম্বর ভোরে শত্রুমুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও।
সকালে মুক্তিযোদ্ধা ও সর্বস্তরের জনগণ মিছিল নিয়ে ঠাকুরগাঁও শহরে প্রবেশ করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেয়। বিজয় ছিনিয়ে আনতে ১০ হাজার নারী-পুরুষকে প্রাণ দিতে হয়। পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন দুই হাজার মা-বোন। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দ মিছিল। জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো জনপদ। হাজার হাজার মানুষ উদ্বেলিত কণ্ঠে স্লোগানে মুক্ত শহরের রাস্তায় নেমে আসে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বদরুদ্দোজা বদর বলেন, ‘৩ ডিসেম্বর সকালে হাজার হাজার মানুষ ঠাকুরগাঁও শহরে সমবেত হয়ে বিজয়ের উল্লাস করে।’
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ৩ ডিসেম্বর প্রথম প্রহর, অর্থাৎ মঙ্গলবার রাত ১২টা ০১ মিনিটে, অপরাজেয় ’৭১-এ শহীদ স্মরণে আলোক প্রজ্জ্বলন, আলোচনা, অপরাজেয় ’৭১, শহীদ মোহাম্মদ আলী ও শহীদ নরেশ চৌহানের সমাধি এবং শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবে।
এ ছাড়াও রাত ১১টায় চৌরাস্তা থেকে অপরাজেয় ’৭১ পর্যন্ত মুক্তির গানের মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
জেলা প্রশাসন বুধবার সকাল ১০টায় প্রেসক্লাব চত্বরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে। এরপর জেলা প্রশাসকের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা অনুষ্ঠান।
জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিজু জানান, প্রতিবারের ন্যায় এ বছরও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।


pngjpg-20250830152137-20251005180221-20251007173837-20251017152047-20251101172754-20251103185902-20251202212849.webp)
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন