ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ

এখনই বাড়ছে না জ্বালানি তেলের দাম: খনিজ উপদেষ্টা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৫, ০৭:১৫ পিএম
বিদ্যুৎ ভবনে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। ছবি- সংগৃহীত

ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে বিশ্বের জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হলেও এখনই দেশে জ্বালানির দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের লাভ থেকে ক্ষতি পোষানো হবে বলেও জানান তিনি। 

মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিদ্যুৎ ভবনে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

অনুষ্ঠানে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্টের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি করা হয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী গ্যাস পাবে লাফার্জ হোলসিম। এতদিন তাদের গ্যাসের দাম ছিল চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত।

নতুন চুক্তি অনুযায়ী, বিইআরসি ঘোষিত নতুন দর ৪০ টাকা (শিল্প) এবং ৪২ টাকা (ক্যাপটিভ) ঘনমিটার হিসাবে গ্যাস পাবে লাফার্জ হোলসিম।

ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘যুদ্ধের মধ্যেও একটি তেলের জাহাজ বন্দরে এসেছে, বাংলাদেশে পর্যাপ্ত মজুদ হাতে রয়েছে। আমাদের সুবিধা হচ্ছে সরবরাহকারীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসেন। সোর্স মধ্যপ্রাচ্য হলেও অনেক সরবরাহকারী রয়েছে যারা সিঙ্গাপুর থেকে, কেউ মালয়েশিয়ার মার্কেট থেকে সরবরাহ করেন। সে কারণে তেলের সরবরাহ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। তবু আমরা যুদ্ধের ওপর নজর রাখছি।’

তিনি বলেন, ‘এলএনজির জন্য কিছু দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি আছে। তেলের চুক্তিগুলো করা আছে ছয় মাসব্যাপী। আর খোলা বাজারে এলএনজির দাম বাড়বে কি না, সেটা আমরা নজর রাখছি, আপাতত দেশে জ্বালানির দাম বাড়াতে হবে না বলে আমরা মনে করছি।’

চুক্তি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা শুধু একটি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি না। বাংলাদেশ যে বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো জায়গা সেটিও বিশ্বের কাছে বার্তা দেওয়া। এখানে একটি সুবিধা রয়েছে, অন্য সব কোম্পানি ঢাকায়, যেখানে আমাদের গ্যাসের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। আর লাফার্জের অবস্থান হচ্ছে সিলেট অঞ্চলে।’

এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘আমরা নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি পুরাতন বিনিয়োগকে ধরে রাখতে কাজ করছি। লাফার্জ হচ্ছে গ্লোবাল লিডার, তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এই চুক্তির মাধ্যমে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া।’

‘যারা এখানে বিনিয়োগ করতে আসবে তারা হয়তো তাদের কাছে জানার চেষ্টা করবে। তাদের কাছে যেন বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা পায়। তাদের ফিডব্যাক থেকে অনেকেই আগ্রহী হবেন বলে মনে করি।’

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কাজ হচ্ছে জানিয়ে অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, ‘এখানে অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। সেখানে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে খুবই আশাব্যঞ্জক। আমরা এই লক্ষ্যমাত্রা পুরণে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো সিজফ্রিয়েড রেঙ্গলির বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এই চুক্তি প্রযুক্তি ব্যবহার বাংলাদেশে এলডিসি গ্রাজুয়েশনে অনেক ভূমিকা রাখবে।’

এ সময় লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ পিএলসির সিইও ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘লাফার্জ হোলসিম শুধু সিমেন্ট ও ক্লিংকার তৈরি করে না, এখানে স্কিল জনশক্তি তৈরি করছি। যাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। যারা বিশ্বের অনেক দেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে।’

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল মারিয়া সিস্তিয়াগা ওচোয়া ডি চিনচেত্রু, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন।