অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও স্বস্তি ফিরছে না নিত্যপণ্যের বাজারে। দামের উত্তাপ প্রতিদিন ছুঁয়ে যাচ্ছে ভোক্তাদের। সংসারের খরচ মেটাতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। উল্লেখযোগ্যহারে বেড়ে গেছে অতি প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার চাল, আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রতিটি বাজার ও সড়কে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য, অধিক মুনাফা, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, অধিক বৃষ্টিতে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হওয়াসহ সরকারের সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে নিত্যপণ্যের বাজার ক্রমেই সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারের ওপর মহলের নির্দেশনাও কাজে আসছে না।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চ্যালেঞ্জিং হলেও সরকারকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতি (ক্যাব) বলছে, মুদ্রাস্ফীতির নিয়ন্ত্রণে অর্থ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব রয়েছে।
জানা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন সরকারের সবাই। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের যেকোনো পণ্যের বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সরকারের সব উইং এ বিষয়ে কাজ করছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে জরুরি সভা করেছেন। খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, দেশে কোনো সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না। তিনি জানান, এ বিষয়ে অর্থ, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, বাজারে পণ্যের জোগান ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য নেই। বাজারে সিন্ডিকেট আছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙার কাজ চলছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর অবস্থান নেবে।
তবে এতকিছুর পরেও বাজারে স্বস্তি মিলছে না সাধারণ মানুষের।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাজার সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত কার্যকর বাজার মনিটরিং এবং অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে শক্তিশালী আইন প্রয়োগ করা দরকার।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ও মজুতদারির বিরুদ্ধে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কেউ কেউ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কাছে তিনটি হাতিয়ার রয়েছে। এগুলো হলো- পণ্যের ওপর শুল্ক ও কর কমানো; খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি বাড়ানো ও বাজার তদারকি জোরদার এবং ডলারের মজুত বাড়ানো।
সরকারের বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট যেদিন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে সেদিন বাজারে মোটা চালের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। খোলা আটার কেজি ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। খোলা সয়াবিনের লিটার ছিল ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা। পাম সুপারের লিটার ছিল ১৩৪ থেকে ১৪০ টাকা। বড় দানার মসুর ডালের কেজি ছিল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। ডিমের হালি ছিল ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। চিনির কেজি ছিল ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা। আর প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
অপরদিকে, এক বছর পরে এসে ২০২৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে দেশের বাজারে মোটা চালের কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা। আটার কেজি ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের কেজি ১৭৬ থেকে ১৭৮ টাকা। পাম সুপার বলতে বাজারে কোনো তেল নেই; সবই সয়াবিন নামে বিক্রি হচ্ছে। বড় দানার মসুর ডাল ১২০ থেকে ১৩৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। প্রতিকেজি চিনির দাম বর্তমানে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। আলুর কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খোলা ভ্যানে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে দেখা গেছে।
শুধু খাদ্যপণ্যই নয়, বেড়েছে সাবান, সোডা, শ্যাম্পু, লোশনসহ সব ধরনের ওষুধের দামও।