মালয়েশিয়ায় শুরু হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম হালাল পণ্যের প্রদর্শনী ২১তম আন্তর্জাতিক হালাল শোকেস (মিহাস ২০২৫)। রাজধানী কুয়ালালামপুরের মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও প্রদর্শনী কেন্দ্রে (মিটেক) চার দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান চলবে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
মালয়েশিয়া বহির্মুখী বাণিজ্য উন্নয়ন করপোরেশন (ম্যাট্রেড) আয়োজিত এ মহোৎসবের উদ্বোধন করবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম। এবারের প্রতিপাদ্য ‘পিনাকল অব হালাল এক্সিলেন্স: হালাল উৎকর্ষতার শীর্ষ।’
চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ অংশ নিয়েছে এ প্রদর্শনীতে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের উদ্বোধন করেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক বেবি রানি কর্মকার। এ সময় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোসাম্মত শাহানারা মনিকাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বছর বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে স্থান পেয়েছে ১২টি বুথ। এর মধ্যে রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান প্রাণ, আকিজ ফুড ও মৈত্রী। পাশাপাশি জামদানি, হস্তশিল্প, পাটজাত পণ্য, সিরামিক, কসমেটিকস, লেদার ও স্কিন কেয়ার সামগ্রীর বুথ আকর্ষণ করছে দর্শনার্থীদের। বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে দুটি বুথ পর্যটন ও ঐতিহ্যবাহী পণ্যের প্রচার করছে।
মালয়েশিয়া প্রবাসী উদ্যোক্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, আমরা চাই এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বাংলাদেশের হালাল পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে নতুনভাবে জায়গা করে নিক। প্রবাসী উদ্যোক্তা হিসেবে এটি আমাদের জন্য গর্বের।
বাংলাদেশি প্যাভিলিয়নে ঘুরতে আসা প্রবাসী দর্শনার্থী নাজমা বেগম বলেন, বাংলাদেশি পণ্য এত বৈচিত্র্যময়ভাবে এখানে উপস্থাপিত হবে এটা সত্যিই আনন্দের। জামদানি ও হস্তশিল্প দেখে মালয়েশিয়ার বন্ধুরাও মুগ্ধ।
আরেক তরুণ উদ্যোক্তা শাহেদ মিয়া বলেন, এমন প্রদর্শনী আমাদের জন্য সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বাড়ছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোসাম্মত শাহানারা মনিকা বলেন, বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক বাজারে অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য এ ধরনের প্রদর্শনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিহাস আমাদের পণ্যকে শুধু মুসলিম ভোক্তাদের কাছে নয়, বৈশ্বিক হালাল শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত করার সুযোগ তৈরি করছে।
ম্যাট্রেডের তথ্য অনুযায়ী, মিহাস ২০২৫-এ বাংলাদেশসহ মোট ৮০টি দেশের ১,০১৯টি কোম্পানি ২,৩৮০টি বুথের মাধ্যমে অংশ নিচ্ছে। প্রায় ৪৫ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম আশা করা হচ্ছে। প্রদর্শনীর পাশাপাশি থাকছে বিশেষ ক্রয় মিশন (আইএনএসপি), নলেজ হাব সেমিনার, পুরস্কার বিতরণী ও ব্যবসায়িক সংলাপ।
এ প্রদর্শনীতে হালাল খাদ্য ও পানীয়, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ইসলামিক অর্থায়ন, ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল, ব্যক্তিগত যত্ন, প্রসাধনী ও মুসলিম-বান্ধব পর্যটন সবকিছুই এক প্ল্যাটফর্মে স্থান পেয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মিহাসে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ কেবল রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়ানোই নয়, বরং কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারেরও এক অনন্য সুযোগ। বর্তমানে হালাল শিল্পের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার। এ ধরনের প্রদর্শনীতে নিয়মিত অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশ’-এর পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা আরও সুসংহত করবে।