ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রংপুরে অ্যানথ্রাক্সে দুজনের মৃত্যু, আক্রান্ত অন্তত ৫০

রংপুর ব্যুরো
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ১১:২২ এএম
পীরগাছায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছে আইইডিসিআর। ছবি- সংগৃহীত

রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অন্তত ৫০ জন ব্যক্তি অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অ্যানথ্রাক্স কি না, তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।

মৃত্যুবরণকারী দুজন হলেন- উপজেলার পীরগাছা ইউনিয়নের আবদুর রাজ্জাক (৪৫) ও পারুল ইউনিয়নের আনন্দী ধনীরাম গ্রামের কমলা বেগম (৬০)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাস ধরে উপজেলায় অসুস্থ গরু জবাই ও সেই মাংস ব্যবহারের ফলে সংক্রমণ ছড়ায়। প্রাথমিকভাবে অসুস্থ গবাদিপশুর মাংস কাটাকাটি ও ভক্ষণ করেই রোগ ছড়িয়েছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা।

পীরগাছা উপজেলার তালুক ইসাত গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক স্থানীয় এক অসুস্থ গরু জবাইয়ের সময় আঙুল কেটে যায়। এরপর থেকেই তার শরীরে জ্বর, ফুলে যাওয়া ও অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দেয়। কয়েকদিন পর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তার মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে, পারুল ইউনিয়নের আনন্দ ধরিরাম গ্রামে এক অসুস্থ গরুর মাংস খাওয়ার পর একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন। যার মধ্যে কমলা বেগমের অবস্থার অবনতি হলে ৬ সেপ্টেম্বর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, মৃত গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে এসে আরও নমুনা সংগ্রহ করেছে।

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত বলেন, গত এক মাসে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে অন্তত ১৪-১৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হতে পারে।

রাজ্জাকের স্ত্রী ফেনসী বেগম বলেন, তার চাচাশ্বশুর মুকুল মিয়ার একটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে সেটি জবাই করে আবদুর রাজ্জাককে কাটাকাটির জন্য ডাকা হয়। মাংস কাটাকাটির সময় রাজ্জাকের একটি আঙুল কেটে যায়। পরে বিকেল থেকে রাজ্জাকের জ্বর শুরু হয়। একই সঙ্গে হাত, কানের নিচে ও বুক ফুলে যায়। তিন দিন পর রাজ্জাক রংপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আনন্দ ধরিরাম গ্রামের সিরাজুল ইসলামের একটি অসুস্থ গরু জবাই করা হয়। এই অসুস্থ গরুর মাংস কাটাকাটি ও খাওয়ার কারণে সিরাজুলের স্ত্রী রাজিয়া (৪৫), ভাতিজা ফেরদৌস, ভাতিজার স্ত্রী রিয়া মনি এবং পাশের গ্রামের ৮ থেকে ১০ জন অসুস্থ হন। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘা দেখা দেয়। এর মধ্যে ৬ সেপ্টেম্বর কমলা বেগমকে (৭০) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।

কমলা বেগমের নাতি সুমন মিয়া বলেন, তার দাদি ছাড়াও বাবা দুলাল হোসেন ও তার আড়াই বছরের ছেলে আসাদুজ্জামান একই সঙ্গে অসুস্থ হন। তাদের বাড়ি থেকে ওই গরুর মাংসের নমুনা নিয়েছিল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। কয়েক দিন আগে তারা এসে ওই মাংস পুঁতে রাখেন ও খেতে নিষেধ করেছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা একরামুল হক জানান, এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৩৩৭টি গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে টিকা দেওয়া হয়েছে। অসুস্থ গবাদিপশু জবাই না করতে উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মাংস থেকে সংক্রমণ ঠেকাতে মাঠপর্যায়ে তদারকি জোরদার করা হয়েছে।