ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫

সিঙ্গার বাংলাদেশের নতুন মাইলফলক অর্জন

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০৬:২০ পিএম
ওয়্যার হারনেস কম্পোনেন্ট রপ্তানি চালান উদ্বোধন অনুষ্ঠান। ছবি- সংগৃহীত

তুরস্কের কোচ হোল্ডিং -এর ফ্ল্যাগশিপ প্রতিষ্ঠান বেকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড গর্বের সঙ্গে তাদের অত্যাধুনিক হোম অ্যাপ্লায়েন্স প্ল্যান্ট থেকে প্রথম ওয়্যার হারনেস কম্পোনেন্ট রপ্তানি চালান উদ্বোধন করেছে। যা দেশের উৎপাদন ও রপ্তানি সক্ষমতার এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি নির্দেশ করে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও বেজার নির্বাহী সদস্য (বিনিয়োগ প্রচার) জনাব সালেহ আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জনাব মোস্তাফিজুর রহমান, সিঙ্গার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব এমএইচএম ফাইরোজ, ফ্যাক্টরি ডিরেক্টর জনাব হাকান আলতিনিশিক এবং সিঙ্গার বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ।

প্রথম রপ্তানি চালানটি একটি বৃহৎ পরিসরের কৌশলগত সাপ্লাই উদ্যোগের সূচনা, যা হোম অ্যাপ্লায়েন্স শিল্পে বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খলে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণকে আরও সুদৃঢ় করে। সরকারি কর্মকর্তারা এই উদ্যোগকে কৌশলগত শিল্প বিনিয়োগের একটি সফল উদাহরণ হিসেবে প্রশংসা করেছেন এবং বৈশ্বিক হোম অ্যাপ্লায়েন্স কম্পোনেন্ট সাপ্লাই নেটওয়ার্কে বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচনের জন্য বেকোকে সাধুবাদ জানান।

‘আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে বৈশ্বিক উৎপাদন মানচিত্রে একটি নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা,’ বলেছেন সিঙ্গার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব এমএইচএম ফাইরোজ।

‘এই প্রকল্প আমাদের দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়ন, প্রযুক্তি স্থানান্তর, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ ও শিল্প উৎকর্ষতায় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।’

‘এই অর্জন বৈশ্বিক মানের সুনির্দিষ্ট উৎপাদন সক্ষমতায় আমাদের দক্ষতাকে তুলে ধরে,’ বলেন ফ্যাক্টরি ডিরেক্টর জনাব হাকান আলতিনিশিক।

‘উৎপাদন শুরু করার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ওয়্যার হারনেস কম্পোনেন্ট রপ্তানি করতে পারা আমাদের টিমের জন্য যেমন গর্বের, তেমনি এটি বাংলাদেশের উচ্চ-মূল্যের উৎপাদন সক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।’

ওয়্যার হারনেস রপ্তানি প্রকল্পের আওতায়, এই প্ল্যান্ট বেকোর নেটওয়ার্কভুক্ত ১৪টি বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্রকে সাপোর্ট প্রদান করবে, ৫টি আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করবে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে ১,০০০ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। মাত্র ১৮ মাসে নির্মিত এবং গ্রাউন্ড ব্রেকিংয়ের ৮ মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করা সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর হোম অ্যাপ্লায়েন্স প্ল্যান্টটি LEED Gold স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী নির্মিত, যেখানে সৌরশক্তি ব্যবহারের প্রস্তুতি এবং জিরো-ওয়েস্ট দর্শন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি বেকোর টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নিট-জিরো নিঃসরণ অর্জনের লক্ষ্যের প্রতিফলন।

ওয়্যার হারনেস প্রকল্প ব্যতীত মোট ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগে স্থাপিত এই প্ল্যান্টটি ১,৩৫,০০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং বর্তমানে রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার ও ওয়াশিং মেশিন উৎপাদন করছে—এবং এবার যুক্ত হলো ওয়্যার হারনেস সিস্টেমও। দেশীয়ভাবে ৯০ শতাংশ এর বেশি পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে এটি একদিকে বাংলাদেশের বাজারে সেবা দিচ্ছে, অন্যদিকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে কনজ্যুমার ডিউরেবলস পণ্যের একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছে।

এ ছাড়াও এটি একটি শক্তিশালী স্থানীয় সাপ্লায়ার ইকোসিস্টেম তৈরি করবে, যা এই খাতে আমদানি নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে।

সিঙ্গার বাংলাদেশ সম্পর্কে

সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ কনজ্যুমার ডিউরেবলস রিটেলার্স, যার রয়েছে সারা দেশে ৪৬৩টি রিটেইল স্টোর এবং ১,০০০-এর বেশি ডিলার স্টোর । সিঙ্গার এই অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম শুরু করে ১৯০৫ সালে। বর্তমানে সিঙ্গার, বেকো এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের অধীনে সিঙ্গার বাংলাদেশ ঘরোয়া ব্যবহারের সব ধরনের কনজ্যুমার ডিউরেবলস পণ্য বিক্রি করে থাকে। সিঙ্গার বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ মালিকানায় রয়েছে বেকো, আর বাকি শেয়ারগুলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে পাবলিকলি লেনদেনযোগ্য।

বেকো সম্পর্কে

বেকো হলো একটি আন্তর্জাতিক হোম অ্যাপ্লায়েন্স কোম্পানি, যার শক্তিশালী বৈশ্বিক উপস্থিতি রয়েছে। এটি ৫৫টির বেশি দেশে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করে, যেখানে ৫০,০০০ এর বেশি কর্মী এবং ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদন সুবিধা রয়েছে। বেকোর মালিকানাধীন বা সীমিত লাইসেন্সে ব্যবহৃত ২২টি ব্র্যান্ড রয়েছে।

২০২৪ সালে ভলিউম ভিত্তিক বাজার শেয়ারে বেকো ইউরোপের সবচেয়ে বড় হোয়াইট গুডস কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১০.৬ বিলিয়ন ইউরো সংযুক্ত বার্ষিক রাজস্ব অর্জন করে।  বেকো বিশ্বব্যাপী ২৯টি গবেষণা ও ডিজাইন সেন্টার ও অফিস রয়েছে, যেখানে ২,৩০০ এর বেশি গবেষক কর্মরত এবং এ পর্যন্ত ৩,৫০০ -এরও বেশি আন্তর্জাতিক নিবন্ধিত পেটেন্ট আবেদন রয়েছে।

কোম্পানিটি হাউসহোল্ড ডিউরেবলস শিল্পে S&P Global Corporate Sustainability Assessment (CSA) -তে ২০২৪ সালের ২২ নভেম্বরের ফলাফলের ভিত্তিতে ধারাবাহিক ছয় বছর সর্বোচ্চ স্কোর অর্জন করেছে এবং ধারাবাহিক আট বছর ধরে Dow Jones Sustainability Indices -এ অন্তর্ভুক্ত। TIME ম্যাগাজিন এবং Statista -এর ২০২৫ সালের বিশ্বের সর্বাধিক টেকসই কোম্পানির তালিকায় বেকো ১৭তম স্থান লাভ করেছে। বেকোর ভিশন হলো- ‘বিশ্বকে সম্মান করা, বিশ্বজুড়ে সম্মানিত হওয়া।’