ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আগেও প্রবাসী আয় নিয়ে ছিল আওয়ামী সরকারের চরম অসন্তোষ। কমতে থাকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।
অন্যদিকে, দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক মিলে আর্থিক খাতে দেখা দেয় অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চরম ঘাটতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও অপসংস্কৃতির ধোঁয়ায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে পড়ে ‘ক্লিনিক্যাল ডেথ’। মৃতপ্রায় সেই আর্থিক খাতে এখন শঙ্কার ভেতরে চলছে চরম অস্থিরতা।
নীতিহীন ও ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের ৫ আগস্ট পতন ঘটে। যুদ্ধপরবর্তী অনটনের দেশে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিহীন শাসকদের সরিয়ে নতুন গভর্নর নিয়োগ দিয়ে সব খাতে স্থিতিশীলতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুশাসনে ‘ক্লিনিক্যাল ডেথ’ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন ছাড়া এখনো বিশেষ পরিবর্তন আসেনি। শুদ্ধাচার ও স্থিতিশীলতায় ন্যাশনাল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
অন্যদিকে, হাসিনা সরকার পরিচালনায় থাকা আওয়ামী সরকারের অনেক শীর্ষ নেতার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সরকার পতনে নিরাপত্তার শঙ্কায় রয়েছেন অন্তরালে তারা। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তাদের মধ্যে আটক হয়েছেন সাবেক সরকারের শীর্ষ কয়েকজন মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারক। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধার না থাকায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রয়েছেন শঙ্কায় মোড়ানো আশা-নিরাশার দোলাচলে।
সরকার পতনের পরই পুঁজিবাজারের উত্থান শুরু হয়। বিশেষত পুঁজিবাজারের খলনায়ক সালমান এফ রহমানের আটকের পরে টাকার অংকে লেনদেন পৌঁছে দুই হাজার কোটি টাকায়। কলঙ্কিত এফ রহমান আটকের পর এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার অভিভাবকের দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ হলেই স্থবির হয়ে পড়ে সংবেদনশীল এই বাজার।
নতুন সরকারের বিভিন্ন আলোচিত পদক্ষেপে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদ এখন অন্তরালে। ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষ ৫টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও তাদের ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা জানতে হালনাগাদ করের তথ্য চেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শীর্ষ ব্যবসায়ী ও তাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), সঞ্চয় অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) জানিয়েছে এনবিআর।
এনবিআর জানায়, বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। সরকার তাদের তথ্য জানতে চাওয়ায় অন্য গ্রুপ অব কোম্পানিগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে শুদ্ধাচারের আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে গ্রুপগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই এমন তথ্য জানান।
সরকারের ছত্রছায়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আর্থিক খাতকে ডুবিয়েছেন সালমান এফ রহমান। পুঁজিবাজার ও আর্থিক খাতে মূর্তিমান আতঙ্ক তিনি। ইতোমধ্যে নতুন সরকারের হাতে আটক হয়েছেন ধিকৃত এই ব্যক্তি। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো চুষে নিয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কঠোর নির্দেশনার পরে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে এনবিআর।
বিতর্কিত শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ সালমান এফ রহমান আটক হওয়ায় আশঙ্কায় বেক্সিমকো গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিতর্কিত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ ও তার দুই ছেলের নামে শ্রমিক হত্যা মামলা নিয়ে শঙ্কিত গ্রুপের অনেক কর্মচারী। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকে ২০১৭ সালের পরে নিয়োগ দেওয়া প্রায় ৮ হাজার কর্মীর ব্যাংকে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে গাজী গ্রুপের নরসিংদীর কারখানায় আগুন দেওয়ার হাজারো কর্মচারী বেকার হয়ে পড়ায় নতুন করে শঙ্কার তৈরি হয়েছে। দিনে দিনে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা।
দেশের আর্থিক খাতে অত্যন্ত সংবেদনশীল পুঁজিবাজার। সেখানেও দুর্নীতির প্রবল ছাপ পড়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি)। বিএসইসির সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। চেয়ারম্যান ও তার ছেলে জুহায়ের শাহরিয়ার ইসলামসহ ১১ ব্যক্তির বেনিফিসিয়াল ওনার্স অ্যাকাউন্ট (বিও অ্যকাউন্ট) স্থগিত করায় অনিশ্চিত আশঙ্কায় দুলছে এই খাত।
হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই আর্থিক খাতগুলোতে অবস্থান শুদ্ধাচারের পক্ষের কর্তারা। বিভিন্ন গ্রুপ, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের অবৈধ সুযোগ নেয়া ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দাঁড়ান। তাদের মতে, নতুনভাবে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশে বৈষম্য ও দুর্নীতির কোনো স্থান নেই। প্রয়োজন নেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরও। সাবেক গভর্নরসহ ডেপুটিদের আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরে নীতিমালা পরিবর্তন করে গ্রাহকদের সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু অসৎ শীর্ষ কর্মকর্তা। এতে ব্যাংক খাতের সুশাসন ভেঙে পড়েছে। হয়েছে অর্থপাচার ও টাকার অপব্যবহার। গত মার্চের শেষে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন