জবিতে পিডি নিয়োগ কেন্দ্র করে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৪, ০২:০৭ পিএম

জবিতে পিডি নিয়োগ কেন্দ্র করে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ

ছবি, সংগৃহীত

জবি: রাজধানীর কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তরসহ পাঁচ দফা দাবিতে গত ৪ নভেম্বর থেকে আন্দোলন করছেন জবি শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে দীর্ঘ বৈঠকে সেনাবাহিনীর হাতে কাজ হস্তান্তরসহ প্রকল্প পরিচালককে বাদ দিয়ে নতুন নিয়োগ এবং হিট প্রকল্পে জবিকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

গত ১৪ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সেই বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলোর কার্যবিবরণী প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে প্রকল্প পরিচালককে (পিডি) বাদ দিয়ে নতুন পরিচালক নিয়োগ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। বিভিন্ন মহলে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে পিডি নিয়োগ দিতে শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ।

অভিযোগ আছে, এ নিয়োগে সবাই তার পছন্দের ব্যক্তিদের বায়োডাটা উপাচার্যের কাছে পাঠায়। শিক্ষক, ছাত্রসহ বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা তাদের ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে উপাচার্যের দ্বারস্থ হন। এদিকে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা। কোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই উপাচার্যের কাছে আসা বায়োডাটা থেকে পিডি নির্ধারণ করা হচ্ছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল পিডি নিয়োগে ব্যাপক অংকের টাকা লেনদেন করেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে পিডি নিয়োগ দিতে উপাচার্যকে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ দেওয়া হয়।

পরিকল্পনা পরিচালক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া আছে, সেখানে উপযুক্ত ব্যক্তি পেলেই আমরা নিয়োগ দেওয়ার চিন্তা করছি। পিডির নিয়োগের বিষয়টা সবার সামনেই আলোচনা করা হয়েছে। এখানে গোপনীয়তার কিছু নেই। যদি কোনো ধরনের অভিযোগ আসে আমরা যাচাই করব।
ড. রেজাউল করিম, উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্রে জানা যায়, মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পের পরিচালক সিদ্দিক মোহাম্মদ জুলফিকার রহমান ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক আজিজুর রহমানকে নিয়োগ দিতে দুই গ্রুপ তোড়জোড় শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, বর্তমান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অফিসারকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিতে। অভিযোগ উঠেছে, এই দুই কর্মকর্তাই সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত।

এছাড়াও সিদ্দিক মোহাম্মদ জুলফিকার রহমান মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও রাস্তাঘাট নির্মাণ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পে কাজ করার পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তিনি বর্তমানে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন। এই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে একটি মহল তার সাথে লেনদেন সম্পন্ন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ আছে, জহির নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে এক কোটি টাকা চুক্তি হয়েছে এই সাবেক সেনাকর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে। এরমধ্যে ২৫ লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। জুলফিকারকে প্রকল্প পরিচালকে হিসেবে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক সিনিয়র সাংবাদিক ও ছাত্রদল নেতার নাম সামনে এসেছে।

এদিকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পিডি আজিজুর রহমানের নামেও প্রকল্প পরিচালনে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে।

শিক্ষার্থীদের দাবি, আবাসন খাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তরে আমরা আন্দোলন করেছি। আমরা চাই সেনাবাহিনীর কোর কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কাছে আমাদের প্রকল্পের দায়িত্ব পড়ুক। যেখানে আমাদের প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হবে এবং কাজের গুণগত মান বজায় থাকবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যেহেতু এই নিয়োগ তাই শিক্ষার্থীদের জানিয়ে যেন এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এখানে কোনো ধরনের বিতর্কিত কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে আমরা আবার আন্দোলন করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের শিক্ষার্থী নওশীন নাওয়ার জয়া বলেন, আমাদের একটাই চাওয়া, দ্রুত একজন সৎ কাউকে নিয়োগ দিয়ে প্রথম ফেইজের কাজ শেষ করা হোক।

পাঁচ দফা আন্দোলনের সংগঠক এ কে এম রাকিব বলেন, যে দুর্নীতি থেকে অবসানের জন্য এত আন্দোলন সংগ্রাম, তা যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবার ভিন্নরূপে ফিরিয়ে আনে তবে তাদের মাশুল দিতে হবে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যা করে তা যেন একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয় এবং শিক্ষার্থীরা বিষয়টা ক্লিয়ার থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম  বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে আমরা কাজ করেছি। পরিকল্পনা পরিচালক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া আছে, সেখানে উপযুক্ত ব্যক্তি পেলেই আমরা নিয়োগ দেওয়ার চিন্তা করছি। পিডির নিয়োগের বিষয়টা সবার সামনেই আলোচনা করা হয়েছে। এখানে গোপনীয়তার কিছু নেই। যদি কোনো ধরনের অভিযোগ আসে আমরা যাচাই করব।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, প্রকল্প দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের সুযোগ দেওয়া হবে না। এখন থেকে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনকে অবহিত করা হবে।

একই প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ছোট-বড় যেকোনো প্রকল্প রাজনীতিমুক্ত, দলীয়মুক্ত ও সিন্ডিকেট মুক্ত করা হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে প্রকল্প প্রণয়নে যাতে, কোনো দুর্নীতি না হয়- এমন নীতি প্রণয়ন করে, এক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরবি/এস

Link copied!