চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগ্বিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, উপাচার্যের কক্ষে তার আসন ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। চলছিল বাগ্বিতণ্ডা। এ সময় একজন বলেন, ‘আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি, আপনাকে আমরা বসিয়েছি। আপনি আমাদের কথা শুনতে বাধ্য।’
শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকেলের এ ঘটনাটির একটি চার মিনিটের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, চবি সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতি সংক্রান্ত সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনার সূত্রপাত। সাক্ষাৎকার বাতিল ও শিক্ষককে বরখাস্তের দাবিতে দুপুরের পর থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে তারা উপাচার্য কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেন এবং তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে।
সেই ভিডিওতে দেখা যায়, ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক দুই নেতা শাখাওয়াত হোসেন ও তাহসান হাবীব সরাসরি উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দেন।
তাহসান হাবীব বলেন, ‘স্যার, আপনাকে আমরা বসিয়েছি। আপনি এখানে নিজ যোগ্যতায় বসেননি।’ এ সময় উপাচার্য প্রতিবাদ করে বলেন, ‘না’, এরপর ছাত্রনেতারা উচ্চস্বরে চিৎকার শুরু করেন। শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এখানে আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি।’ বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তাহসান হাবীব উপাচার্যকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘আপনি কেন ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রমোশন দিচ্ছেন? আমাদের রক্তের সঙ্গে, আমাদের বিপ্লবের সঙ্গে বেইমানি করে...’
ঘটনার সময় উপাচার্য উপস্থিত সাংবাদিকদের ফোন বন্ধ রাখতে বলেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্যের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এদিকে, নিজের মন্তব্য নিয়ে পরে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাহসান হাবীব। তিনি বলেন, ‘উপাচার্য যোগ্য নন, এমনটা বলিনি। বলতে চেয়েছি, তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসেননি। আন্দোলনের ফসল হিসেবে এসেছে এই প্রশাসন। সেই শহীদের রক্তকে অস্বীকার করলে আমরা মেনে নেব না। পরবর্তীতে বিষয়টি উপলব্ধি করে আমি উপাচার্যের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি।’
এদিকে তাহসান হাবীব বর্তমানে ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে আর জড়িত নন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির বর্তমান আহ্বায়ক তামজিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘অন্য একটি সংগঠনের প্রভাব থাকায় তাহসানকে অনেক আগেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
সাবেক শিবির নেতা শাখাওয়াত হোসেনও বলেন, ‘উত্তেজনার বশে কথাগুলো বলে ফেলেছেন তাহসান। সেভাবে ভেবেচিন্তে বলা হয়নি।’
ভিসি অফিসে উত্তেজিত ব্যক্তি ইসলামী ছাত্রশিবিরের অফিস সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খালেদ বলেন, ‘আমরা ভিসি অফিসে ঢোকার পরই, স্যারের থেকে ভালো ব্যবহার পায়নি। তারপর আমরা থাকা অবস্থায় কুশল বরণ চলে আসে, তখন আমি উত্তেজিত হয়ে বলি, খুনি কেন আপনার অফিসে আসলো, স্যার।’
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিনই পদত্যাগ করেন উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা, পরিবহন প্রশাসক, প্রক্টরিয়াল বডির ১০ সদস্য ও ১৪টি হলের প্রাধ্যক্ষ।
পরে নতুন উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। চবি অধ্যাদেশ অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার কথা সিনেটের মাধ্যমে। তবে তা দীর্ঘদিন ধরেই উপেক্ষিত। কয়েক মেয়াদ ধরে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় নয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :