বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৫, ০৪:১৫ এএম

ট্রাম্প কী শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাবেন, প্রক্রিয়া কী?

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৫, ০৪:১৫ এএম

নোবেল ট্রাম্প। ছবি -সংগৃহীত

নোবেল ট্রাম্প। ছবি -সংগৃহীত

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মানগুলোর একটি। এই পুরস্কার প্রতি বছর এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়, যারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। পুরস্কারটি প্রতিষ্ঠা করেন সুইডিশ উদ্ভাবক ও ব্যবসায়ী আলফ্রেড নোবেল। তার উইলে বলা হয়, তার সম্পদ এমন একটি তহবিল গঠনে ব্যবহার হবে, যা ‘মানবজাতির জন্য সর্বাধিক উপকারকারী ব্যক্তিদের’ পুরস্কৃত করবে।

নোবেলের উইলে শান্তি পুরস্কার দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, যিনি জাতিগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলেন, অস্ত্র ও স্থায়ী সেনাবাহিনী বিলুপ্তির প্রচেষ্টায় অবদান রাখেন এবং শান্তি কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা ও বিস্তারে ভূমিকা রাখেন- তাকে এই পুরস্কার দেওয়া উচিত। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পুরস্কারের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, গণতন্ত্রের প্রসার এবং মানবাধিকার রক্ষার কাজেও পুরস্কার দেওয়া হয়।

এ বছর পুরস্কার ঘোষণা

চলতি নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় (বাংলাদেশ সময়)। চূড়ান্তভাবে পুরস্কার প্রদান করা হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর, নরওয়ের রাজধানী অসলোতে এক জমকালো অনুষ্ঠানে। এটি একমাত্র নোবেল পুরস্কার, যা সুইডেনের পরিবর্তে নরওয়েতে প্রদান করা হয়। নরওয়ের সংসদ কর্তৃক মনোনীত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি পুরস্কার বিজয়ী নির্বাচন করে।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার প্রক্রিয়া

শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন প্রক্রিয়া অত্যন্ত গঠনমূলক ও নির্দিষ্ট নিয়মে চলে। যোগ্য মনোনয়নদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- জাতীয় সংসদের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারপতি, আগের নোবেল বিজয়ী এবং নোবেল কমিটির সদস্যরা। প্রতি বছর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মনোনয়ন জমা দিতে হয়। এরপর প্রাপ্ত মনোনয়ন থেকে কমিটি একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে এবং মনোনীতদের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে।

বিজয়ী নির্ধারণ করা হয় গোপন ভোটের মাধ্যমে, তবে কমিটি চেষ্টা করে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার। মনোনয়ন পাওয়া মানেই বিজয়ী হওয়া নয়। এছাড়া, মনোনয়ন সংক্রান্ত সব তথ্য ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন রাখা হয়, এবং কমিটি প্রকাশ্যে মনোনীতদের নাম কখনো প্রকাশ করে না। যদিও অনেক সময় মনোনয়নদাতারা নিজেরাই তা প্রকাশ করেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নোবেল পুরস্কার

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে ‘শান্তির রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি দাবি করেন, তার প্রশাসন দ্বিতীয় মেয়াদে ইসরায়েল-ইরান, ভারত-পাকিস্তান, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার মতো অন্তত ছয়-সাতটি সংঘাতের অবসান ঘটাতে সহায়তা করেছে। তিনি আরও বলেন, তার নেতৃত্বে আমেরিকা কোনো নতুন যুদ্ধে জড়ায়নি, বরং যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

তাছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের একটি শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে তিনি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলেও জানিয়েছেন। তবে এসব প্রচেষ্টার কতটা বাস্তব প্রভাব ছিল, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ছিল পরোক্ষ অথবা বিতর্কিত।

মনোনয়ন ও সমর্থন

২০২৫ সালের শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পকে মনোনয়ন দিয়েছে পাকিস্তান সরকার ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এছাড়া, ইসরায়েলি হোস্টেজেস ফ্যামিলিজ ফোরাম ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস কর্তৃক অপহৃত ইসরায়েলিদের মুক্ত করতে ট্রাম্পের ‘অটল প্রতিশ্রুতি ও অসাধারণ নেতৃত্ব’ তুলে ধরে তাকে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করতে নোবেল কমিটিকে আহ্বান জানিয়েছে।

তবে সমস্যা হলো, এই আহ্বান ও মনোনয়ন সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পর জমা পড়েছে, তাই ২০২৫ সালের পুরস্কারের বিবেচনায় এসব মনোনয়ন অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে তার প্রথম মেয়াদেও একাধিকবার মনোনীত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি বিজয়ী হননি। নিজেই তিনি বলেছেন, তার ‘চার বা পাঁচবার’ এই পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। যদিও সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি মনোযোগ চাই না। আমি শুধু যুদ্ধ থামাতে চাই।’

ট্রাম্প কি পুরস্কার পেতে পারেন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের শান্তি পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, যদিও তার কিছু প্রচেষ্টা ছিল প্রশংসনীয়, কিন্তু অধিকাংশই ছিল আংশিক, অসমাপ্ত বা রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত। উপরন্তু, ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব, নীতি এবং রাজনৈতিক অবস্থান অনেক ক্ষেত্রেই নোবেল কমিটির নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হয়।

অতীতে ২০০৯ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার জয় ছিল কিছুটা আশ্চর্যজনক, কারণ তখনো কোনো উল্লেখযোগ্য শান্তি চুক্তি হয়নি। এই উদাহরণ টেনে ট্রাম্পপন্থীরা যুক্তি দেন, তিনিও এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। তবে, নোবেল কমিটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করে, যারা নীরবে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে চলেছেন। কমিটি সাধারণত বিতর্কিত ও বিভাজনমূলক প্রার্থীদের এড়িয়ে চলে।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের ইতিহাস

১৯০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নোবেল শান্তি পুরস্কার মোট ১০৫ বার প্রদান করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ৯২ জন পুরুষ, ১৯ জন নারী এবং ২৮টি সংস্থা পুরস্কার পেয়েছে। প্রথম বিজয়ী ছিলেন ফরাসি অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ ফ্রেডেরিক প্যাসি এবং রেড ক্রসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিন হেনরি ডুরান্ট।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন বারাক ওবামা (২০০৯), মালালা ইউসুফজাই (২০১৪), জিমি কার্টার (২০০২), ডেসমন্ড টুটু (১৯৮৪), এলি উইজেল (১৯৮৬)। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিলোপের আন্তর্জাতিক অভিযান (আইসিএএন)। নোবেল কমিটি সাধারণত সেইসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাজকে স্বীকৃতি দেয়, যারা মানবতার কল্যাণে শান্তি, ভ্রাতৃত্ব এবং অধিকার রক্ষার জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন।

Link copied!