নিরাপদ পানি মানুষের জীবনের অন্যতম মৌলিক অধিকার, অথচ রাজধানী ঢাকায় এই অধিকার মারাত্মকভাবে উপেক্ষায় পরিণত হয়েছে। ঢাকার অনেক এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানির গুণমান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বাসিন্দারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
ট্যাব ছাড়লেই বের হচ্ছে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি, কিলবিল করছে পোকা! পালটে গেছে পানির রং। বাধ্য হয়েই দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে সেই পানিই ব্যবহার করছে মানুষ। ভুক্তভোগীরা জানান, ময়লা পানি ব্যবহারের কারণে হরহামেশাই দেখা দিচ্ছে পেটের অসুখ ও চর্মরোগ।
প্রায় দুই মাস রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এ অবস্থা চললেও একরকম নির্বিকার দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তাদের দাবি- ওয়াসার পানি দূষিত নয়। ময়লা, দুর্গন্ধ বা পোকা নিজ নিজ বাসার রিজার্ভারের কারণে হচ্ছে।
রামপুরা, বনশ্রী, আফতাবনগর, মগবাজার, কল্যাণপুর, তেজগাঁও, মালিবাগ, মধুবাগ, বাসাবো, মানিকনগর ও খিলগাঁওসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ট্যাপে পানি ছাড়লে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে তারা ছোট ছোট লার্ভার মতো পোকা ও কেঁচো দেখতে পাচ্ছেন।
বাসিন্দারা জানান, পানির ট্যাংক পরিষ্কার করলে ১০-১৫ দিন একটু ভালো থাকে। পরে আবার পোকা আসতে থাকে। ভুক্তভোগীরা জানান, গত দেড় মাস ধরে পানি একদম ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ। আগে ওয়াসার লাইনের পানি ফুটিয়ে পান ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা যেত। এখন ট্যাপ ছাড়লেই পানিতে পোকা আসছে। ট্যাপের মুখে কাপড় বেঁধে চালিয়ে নিচ্ছি।
রামপুরা এলাকার বাসিন্দা হামিদুর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে লেখেন, ‘রামপুরা ওয়াসার পানিতে চিকন লাল লাল এক ধরনের পোকা আসে। সবার বাসায় কি এমন হয়? মন্তব্যের ঘরে অনেকেই একই সমস্যার কথা জানান। ’
মগবাজারের বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, ‘বেশ কয়েকবার ছোট ছোট পোকার সঙ্গে পানিতে ছোট কেঁচোর মতো লাল পোকাও দেখেছি। এই পানিতে গোসল ও রান্না করতে সমস্যা হচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা পানি পান করতে চায় না। তিনি আরও জানান, পানির ট্যাংক পরিষ্কার করেও সমস্যার সমাধান হয়নি।’
বনশ্রীর বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাজধানীতে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ ও পোকা, বাসিন্দাদের ভোগান্তি চরমে। কল ছাড়লেই বের হচ্ছে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি ও পোকা। এ পানি পান না করলেও বাধ্য হয়ে বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করছে মানুষ। বাসা-বাড়ির পানির ট্যাংক পরিষ্কার করেও সমাধান মিলছে না। সবাই বলছে পানিতে পোকামাকড়ের উৎস ওয়াসার সাপ্লাই পাইপ।’
আফতাবনগরের বাসিন্দা এএনএম মাসুম ফেসবুকে লেখেন, ‘গোসল আর রান্না-বান্নার পানিতে কিলবিল করছে পোকা! এ সমস্যা ফেইস করছি অনেকদিন ধরে। কিন্তু ওয়াসার পক্ষ থেকে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি। খিলগাঁওয়ের মেহেদি হাসান রানা ও মগবাজারের তোফায়েলও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন।’
এসব অভিযোগ ঢাকা ওয়াসাতেও জানানো হয়েছে। তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এর দায় নিতে নারাজ। তাদের দাবি, ওয়াসার সরবরাহ লাইনে কোনো সমস্যা নেই। পাইপলাইনে পানির নমুনা পরীক্ষা করে তারা এমন কোনো সমস্যা পাননি।
ওয়াসার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, লাইনে পোকা জন্মানোর সুযোগ নেই। তাদের ধারণা, অভিযুক্ত এলাকার কোনো বাড়ির পানির ট্যাংকে পোকা জন্মে থাকতে পারে অথবা অন্য কোনো ফাটা বা উৎস থেকে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পানিতে ময়লা ও পোকার বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার মধুবাগ এলাকায় যান তাদের তিনজন কর্মকর্তা। কয়েকটি বাসা থেকে সংগ্রহ করা পানির নমুনায় পোকা উপস্থিতি দেখতে পান তারা। এ জন্য দায়ী করেন ট্যাংক পরিষ্কার না করাকে।
ওয়াসার উপসহকারী প্রকৌশলী তৌফিক আহমেদ চৌধুরী জানান, ‘ঠিকমতো ট্যাংক পরিষ্কার না করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। লাইনের পানি পরিষ্কার আছে, ট্যাংক ঠিকভাবে পরিষ্কার করলে স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ’
তবে বাসাবাড়ির পানির ট্যাংক ঠিকমতো পরিষ্কার না করার অভিযোগ নাকচ করছে এলাকাবাসী। এ অবস্থায় ওই এলাকায় ওয়াসার পানির পাইপের মান পরীক্ষা করে দেখার আশ্বাস দেন পরিদর্শনে আসা ওয়াসার কর্মকর্তারা।

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
       -20251031164129.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন