ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানায় উপচে পড়া দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে। ঈদের তৃতীয় দিন সোমবার (৯ জুন) সকাল থেকেই মূল ফটকে টিকিট সংগ্রহে ভিড় তৈরি হয়। শিশু-কিশোরদের সঙ্গে ছিলেন পরিবার-পরিজনরাও। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রাণিজগতের সঙ্গে একদিনের ঘনিষ্ঠতা যেন আনন্দে ভাসিয়েছে সবাইকে।
কেরানীগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে সিংহ, বাঘ, হাতি দেখে খুব খুশি হয়েছে। প্রতিবছরই ঈদে কোথাও না কোথাও যাই, এবার চিড়িয়াখানাকে বেছে নিয়েছি।’
তবে ঢাকার বাইরের অনেক দর্শনার্থীও ঈদ কাটাতে এসেছেন চিড়িয়াখানায়। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলা থেকে আসা অনেক দর্শনার্থীদের দেখা গেছে সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে।
চিড়িয়াখানার খাঁচাগুলোর সামনে ভিড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল দর্শনার্থীরা। কেউ মোবাইলে ছবি তুলছে, কেউবা শিশুদের নতুন প্রাণীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
তবে শুধু আনন্দ নয়, কেউ কেউ হতাশাও প্রকাশ করেছেন চিড়িয়াখানার অব্যবস্থাপনা নিয়ে।
পরিবেশবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী মুন্নী আক্তার যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক চিড়িয়াখানার নাম থাকলেও বাস্তবে প্রাণীদের যত্ন হচ্ছে না। অনেক খাঁচায় পানি নেই, খাবারের অস্বচ্ছতা চোখে পড়ে। একই ধরনের প্রাণী কয়েকটি খাঁচায় রাখা হয়েছে। যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারে, তাহলে দর্শনার্থীদের এভাবে প্রতারিত করা ঠিক নয়।’
জাতীয় চিড়িয়াখানার তথ্য কেন্দ্র জানায়, ঈদের ছুটিকে ঘিরে দর্শনার্থীদের ভিড় সামাল দিতে বাড়ানো হয়েছে টিকিট কাউন্টার, ভেতরে বসার স্থান ও খাবারের দোকান। নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত কর্মী। পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া শিশুকে অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত রোববার চারজন শিশু হারিয়ে গিয়েছিল, যাদের সফলভাবে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
চিড়িয়াখানার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এখানে ১৩৭ প্রজাতির প্রায় ২,৫০০টি প্রাণী রয়েছে। দর্শনার্থীদের কাছে সাদা বাঘ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, আফ্রিকান সিংহ ও জিরাফ বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
ঈদের দ্বিতীয় দিন (রোববার) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। গাছের ছায়ায় হেঁটে হেঁটে প্রাণী দেখা, পশু-পাখির কাণ্ডকারখানা দেখে শিশুদের চমক, আর বড়দের ক্যামেরাবন্দি করে রাখা—এসব মিলিয়ে আনন্দঘন সময় কাটে দর্শনার্থীদের।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবারের ঈদে ৮ থেকে ১০ লাখ দর্শনার্থী আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জাতীয় চিড়িয়াখানা রাজধানীবাসীর জন্য একটি বড় বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ঈদের সময় নিজেকে নতুনভাবে হাজির করেছে। তবে খাঁচার ভেতরের প্রাণীদের প্রতি আরও যত্ন ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন দরকার বলেই মনে করছেন সচেতন দর্শনার্থীরা।