পাঁচ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়কে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শনিবার (২১ জুন) সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন,‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তারা দোষীদের শাস্তির দাবি তোলেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়বেন না বলেও জানান তারা।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘ইউআইইউ রিফর্ম আন্দোলনে অংশগ্রহণের জেরে গত ২৬ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতা ও গড়িমসিতে তারা ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দুই মাসের বেশি সময় ধরে নানা চেষ্টার পরও কোনো কার্যকর সমাধান না আসায় শিক্ষার্থীরা আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছেন।’
আন্দোলনকারীদের অন্যতম লাবিব মুহান্নাদ জানান, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ২৫ জন শিক্ষার্থীকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইউনাইটেড গ্রুপ সরকারের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাখত, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বলেই তাদের ওপর দমন-পীড়ন নেমে এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল শিক্ষার পরিবেশের উন্নয়ন ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা। এ দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরও শিক্ষার্থীদের আট মাস ধরে অপেক্ষায় রেখে অবশেষে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ প্রশাসনিক জবাবদিহিতা চাই।’
এর আগে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার প্রত্যাহারসহ ৫ দফা দাবিতে রাজধানীর নতুনবাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২১ জুন) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে যোগ দেয় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশের নেতাকর্মীরাও।
সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, আজকের মধ্যে ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া না হলে আগামীকাল রোববার (২২ জুন) রাজধানীজুড়ে ‘ব্লকেড কর্মসূচি’ পালন করা হবে।
দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। ফলে টানা প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা ধরে কুড়িল থেকে বাড্ডা ও গুলশানমুখী প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
এদিকে, বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ভাটারা থানা পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। তবে পুলিশ অ্যাকশনে গেলেও শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। কিছু সময়ের জন্য আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হলেও আবারও তারা রাস্তা অবরোধ করেন।
পুলিশের অ্যাকশনের পর ফের অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন দাবি না মানা পর্যন্ত নতুনবাজারের রাস্তা ছাড়বেন না তারা। শুধু তাই নয়, আজকের মধ্যে দাবি মানা না হলে আগামীকাল রোববার পুরো ঢাকা ব্লকেড করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি করছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবি:
১. বহিষ্কার প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণ: অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের নিঃশর্তভাবে বহিষ্কার প্রত্যাহার করতে হবে এবং শিক্ষাজীবনের ক্ষতি ও আর্থিক-মানসিক ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. তদন্ত ও শাস্তি: অন্যায় বহিষ্কারের সঙ্গে জড়িত কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।
৩. রিফর্ম বাস্তবায়ন: ইউআইইউ-তে দীর্ঘদিনের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার লক্ষ্যে রিফর্ম দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. স্বতন্ত্র কমিশন গঠন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকির জন্য একটি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে, যাতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
৫. ১৫% কর বাতিল: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর বাতিল করতে হবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে এই অর্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে বেলা দেড়টার দিকে ভাটারা থানার ওসি মো. রাকিব হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এখনো সড়ক অবরোধ করে রেখেছে।’