ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

‘ব্যবসায়িক বিরোধ’ মেটাতে ডেকে নিয়ে নৃশংস হত্যা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৫, ০৯:১০ পিএম
ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে জনসমক্ষে ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়। ছবি- ভিডিও থেকে নেওয়া

ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে জনসমক্ষে ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়। এরপর নিথর দেহের ওপর চলে অবর্ণনীয় নৃশংসতা। বুধবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।

ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। এরপর তার নিথর দেহ টেনে এনে প্রকাশ্যে লাথি-চড়, লাফিয়ে আঘাতসহ বীভৎস হামলা চালানো হয়।

ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কালো প্যান্ট পরা খালি গায়ের এক যুবক নিহতের গালে চড় মারছেন। আরেকজন তার বুকের ওপর লাফিয়ে আঘাত করছেন। এরপর একে একে আরও কয়েকজন এসে একই কায়দায় হামলা চালান। উপস্থিত শতাধিক মানুষ ভয়ে কিংবা হতবিহ্বল হয়ে শুধু দেখেছেন, কেউ এগিয়ে আসেননি। হাসপাতাল সংলগ্ন আনসার ক্যাম্প থেকেও কেউ এগিয়ে আসেনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রক্তাক্ত লাশের ওপর যা হয়েছে, সেটি অবর্ণনীয়। এই আচরণ চিন্তার বাইরে। সমাজে শৃঙ্খলা ও ঐক্য না থাকলে এমন নৃশংসতা বাড়তেই থাকবে।’

ঘটনাস্থল মিটফোর্ড হাসপাতালের ভেতরে হলেও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন না। আনসার ক্যাম্পের প্লাটুন কমান্ডার জানান, পেছনের গেটে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দায়িত্ব থাকে। ঘটনার সময় তারা সামনের গেটে ছিলেন। এখন থেকে সেখানে ২৪ ঘণ্টা টহলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, পূর্বপরিচয় থাকার সুবাদে সোহাগকে ওই এলাকায় ডেকে নেয় অভিযুক্তরা। পরে ব্যবসায়িক আধিপত্য বিস্তার ও অর্থসংক্রান্ত বিরোধে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের আগে মঙ্গলবার রাতে সোহাগের ‘সোহানা মেটাল’ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গুলি চালানো হয়। পরদিন ‘মীমাংসার’ কথা বলে তাকে ডেকে নেওয়া হয়।

সোহাগ কেরানীগঞ্জের কদমতলী মডেল টাউনে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলায়। তার এক মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং এক ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

পরিবারের ভাষ্যমতে, অভিযুক্ত মহিন আগে থেকেই সোহাগের বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং মাঝে মাঝে তাদের বাসায় খাওয়াদাওয়াও করতেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ব্যবসার অর্ধেক মালিকানা দাবি করেন। এতে রাজি না হওয়ায় তাকে হুমকি দেওয়া হয়।

ঘটনার পরপরই কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী সোহাগের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম। এজাহারে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিনের কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে এবং অস্ত্র আইনে মামলাও হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া দুজন ছাড়াও এজাহারে যে ১৭ জনের নাম রয়েছে, তারা হলেন: সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, মো. নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাজীব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।

এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দ্রুত বিচার দাবি করেছে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।