মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার ভয়াবহতার ক্ষত এখনো দগদগে। অথচ এ ট্র্যাজেডিতে প্রিয় সন্তানকে হারানো বাবা-মাকে মাত্র ২৬ দিনের মাথায় ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করতে দফায় দফায় নিরাপত্তা প্রহরীদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (১৭ আগস্ট) সন্তানহারা একদল অভিভাবক ৮ দফা দাবি নিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যান। দুপুর ১২টার দিকে তারা প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, দুপুর ১২টার দিকে ১৫-২০ জন অভিভাবক ভেতরে প্রবেশের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করছেন। তারা বাগবিতণ্ডার একপর্যাযে নিরাপত্তা প্রহরীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে ভেতরে প্রবেশ করেন। অভিভাবকদের কোনোমতে প্রবেশ করতে দিলেও খড়গ নেমে আসে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর। কিন্তু অভিভাবকরা তাদের দাবি-দাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করবেন বলে দাবি তোলেন। একপর্যায়ে তারাই গণমাধ্যমকর্মীদের জোর করে ভেতরে প্রবেশ করানোর ব্যবস্থা করেন।
অভিভাবকরা জানান, আগেই অধ্যক্ষের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতিও নিয়েছেন তারা। কিন্তু তাদের এমন পরিচয় ও পূর্বানুমতির বিষয়টি জানানোর পরও জবাবে নিরাপত্তা প্রহরীরা সাফ জানিয়ে দেন, ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই। বহু কষ্টে অভিভাবকরা ভেতরে প্রবেশ করলে তাদের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে বসতে দেওয়া হয়। কথা ছিল সেখানে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম, প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল নুরন্ নবী, উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাসুদ আলম উপস্থিত থাকবেন।
তারা বলেন, অভিভাবকরা ভেতরে প্রবেশের পর কর্তৃপক্ষ নতুন শর্ত দেয়। তাদের জানানো হয়, ৩-৪ জনের একটি প্রতিনিধিদলই কেবল অধ্যক্ষ, উপদেষ্টা ও উপাধ্যক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন। একই সঙ্গে সেখানে গণমাধ্যমের কেউ থাকতে পারবে না। এ শর্তে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত অভিভাবকদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেনি মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ।
অভিভাবকদের অভিযোগ, অভিভাবকদের প্রশ্ন ও গণমাধ্যমকর্মীদের এড়াতে গোপনে অন্যদিক দিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা এবং অধ্যক্ষ।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল বলেন, ‘আমরা কাউকে ভেতরে প্রবেশে বাধাও দিইনি, কারও ভয়ে কেউ বেরিয়েও যাননি। এটা যারা বলছেন, সেটা সঠিক নয়।’
শাহ বুলবুলের দাবি, ‘যেহেতু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ট্রমায় ভুগছেন। এ সময়ে আমরা এভাবে দলবেঁধে কাউকে হট্টগোল করতে নিরুৎসাহিত করছি। সে জন্য তাদের আমরা একটি প্রতিনিধিদল ঠিক করে স্মারকলিপি দিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা সবাই একসঙ্গে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন। আবার স্মারকলিপি দেওয়ার সময়ও তারা সবাই সেখানে যেতে চান। কিন্তু অধ্যক্ষ ও উপদেষ্টা মহোদয় চেয়েছিলেন, অভিভাবকদের দাবি-দাওয়া একান্তে শুনতে এবং তা পূরণ করতে।’
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিয়াবাড়ির স্থায়ী ক্যাম্পাসে একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে এ পর্যন্ত ৩৬ জন নিহত হয়েছেন। অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন। তাদের কারও কারও অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন