চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
বৃহস্পতিবার শেওড়াপাড়া ও তেজগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বিপ্লব খান (৩৩), ফারিন তানহা ওরফে তোফা (২৯), শম্পা আক্তার (২৪), শাহ মোহাম্মদ জোবায়ের ওরফে অভিক (২৩), আল-মাসুদ (৩২), মনিকা আক্তার (১৮) ও আবু সুফিয়ান (২৭)।
যেভাবে কাজ করে চক্রটি
ডিএমপি’র ডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই চক্রটি ফেসবুক, ইমো এবং টেলিগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় চাকরির বিজ্ঞাপন দিত।
আগ্রহী প্রার্থীদের সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগের পর তাদের দেখা করার জন্য মিরপুর বা আশপাশের এলাকায় ডেকে আনা হতো। এরপর কৌশলে তাদের একটি গোপন আস্তানায় নিয়ে আটকে রেখে মারধর এবং ভয়ভীতি দেখানো হতো।
গত ১৯ আগস্ট এমনই এক প্রতারণার শিকার হন শরীয়তপুরের বাসিন্দা মো. রহমান ও বান্দরবানের মনির উদ্দিন। তারা দু’জন মোহাম্মদপুরের একটি থেরাপি সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরিচিত হন।
রহমান গাড়িচালক হিসেবে চাকরি খুঁজছিলেন। অন্যদিকে, কক্সবাজারের একটি চীনা প্রকল্পে দোভাষী হিসেবে কাজ করেন মনির। মনির ফেসবুকে একটি চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে রহমানের সঙ্গে নম্বরটি শেয়ার করেন।
সেই নম্বরে যোগাযোগ করার পর রহমানকে মিরপুরের ৬০ ফুট বারেক মোল্লার মোড় এলাকায় দেখা করতে বলা হয়। সেখানে পৌঁছালে এক যুবক তাদের একটি অফিসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে শেওড়াপাড়ার একটি বাড়ির ষষ্ঠ তলায় নিয়ে যায়।
সেখানে আগে থেকেই ৯-১০ জন পুরুষ এবং ৬-৭ জন নারী অবস্থান করছিলেন।
আটকে রেখে মুক্তিপণ ও হয়রানি
আটক করার পর চক্রের সদস্যরা রহমান ও মনিরকে মারধর করে। এরপর তাদের পাশে কয়েকজন নারীকে বসিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ১১ হাজার টাকা এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়।
এছাড়াও, রহমানের একটি এবং মনিরের দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। চক্রটি হুমকি দেয়, যদি তারা এই ঘটনা কাউকে জানায়, তাহলে ধারণ করা ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এবং তাদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়।
পরে বিষয়টি ডিবি মিরপুর বিভাগের নজরে এলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান শুরু করে। অভিযানে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং মনিরের ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে যে, আত্মসম্মানের ভয়ে ভুক্তভোগীরা সাধারণত অভিযোগ করেন না, আর এই সুযোগেই তারা দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা চালিয়ে আসছিল।