জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজসাক্ষী হিসেবে পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বর্তমানে গাজীপুরের বিশেষ কারাগারে রয়েছেন। দণ্ডাদেশের কারণে কারাবিধি মোতাবেক তার ডিভিশন–১ সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হচ্ছে, ফলে এখন তিনি ডিভিশন–২-এর সুবিধা পাবেন। তবে তাকে সাধারণ কয়েদির পোশাক পরিধান করতে হবে।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোতাহের হোসেন জানান, ‘ডিভিশন–১-এ থাকা কোনো বন্দির সাজা হলে তাকে অবশ্যই ডিভিশন–২-এ নিতে হয়। সাজাপ্রাপ্ত বন্দির পুনরায় ডিভিশন–১ পাওয়ার সুযোগ নেই।’
তবে সাবেক আইজিপি মামুন চাইলে তার ডিভিশন সুবিধা বহাল রাখার আবেদন করতে পারেন। সরকার অনুমোদন দিলে তিনি ডিভিশন–২ সুবিধা পাবেন; অনুমোদন না হলে তাকে সাধারণ বন্দি হিসেবে থাকতে হবে।
ডিভিশন সুবিধা কারা পান
কারাবিধি অনুযায়ী বন্দিদের তিন শ্রেণিতে রাখা হয়—ডিভিশন–১, ডিভিশন–২ ও ডিভিশন–৩।
সরকার ঘোষিত ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী ১ থেকে ১৮ নম্বর অবস্থানে থাকা সাবেক ব্যক্তিরা ডিভিশন–১ সুবিধা পান। এ ছাড়া বীর উত্তম, বীর বিক্রম, বীর প্রতীকপ্রাপ্ত ব্যক্তি, সিআইপি, স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং এমেরিটাস প্রফেসররা প্রথম শ্রেণির বন্দির সুবিধা পান।
সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা ও জীবনযাপনের ধরন বিবেচনায় উচ্চমানের অন্য বন্দিদের ডিভিশন–২ দেওয়া হয়।
মামুনের বিরুদ্ধে মামলা দেড়শ’র বেশি
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানা ও আদালতে দেড়শ’র বেশি মামলা রয়েছে।
তার আইনজীবী জায়েদ বিন আযাদ জানান, রায় ঘোষণার পরও আপিলের বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাননি। রায়ের অনুলিপি পেতে কয়েক দিন সময় লাগবে।
তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও একটি মামলা মামুনের বিরুদ্ধে তদন্তাধীন রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, গুরুতর অপরাধ বা হত্যার মামলায় অনেক সময় আসামিদের মধ্যে কাউকে রাজসাক্ষী করা হয়। গণহত্যার দায় স্বীকার করে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে আদালত তা গ্রহণ করেন।
অন্যান্য অভিযুক্ত ও গ্রেপ্তার
জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থান–সংশ্লিষ্ট মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি মামুনসহ আরও কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ ছাড়া ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা, পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন, মহিউদ্দিন ফারুকী, এস এম তানভীর আরাফাত, আসাদুজ্জামান, আব্দুল্লাহিল কাফী, জুয়েল রানাসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সূত্র মতে, পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে ডিএমপির সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে-সংখ্যা অন্তত ১৭৫।
মামুনের কর্মজীবন
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বাংলাদেশ পুলিশের ২৯তম মহাপরিদর্শক ছিলেন। ১৯৮২ সালে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন তিনি। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে আইজিপি করা হয়। এর আগে তিনি র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন