ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে। বিনিয়োগকারীরা এই প্রভাব মূল্যায়ন করায় প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম চার হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমার প্রত্যাশা, বৈশ্বিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বর্ণের রেকর্ড বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও সরবরাহ ঘাটতির কারণে রুপার দামকেও ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত স্পট স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স ৪ হাজার ৩৫ দশমিক ০৭ ডলারে স্থির ছিল। ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য মার্কিন সোনার ফিউচার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৪ দশমিক ৬০ ডলারে। বুধবার (৮ অক্টোবর) প্রথমবারের মতো স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ডলারের সীমা অতিক্রম করে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৫৯ দশমিক ০৫ ডলারে পৌঁছেছিল।
রুপার দাম ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৪৯ দশমিক ৬৫ ডলারে পৌঁছেছে। চলতি বছর রুপার দাম ইতোমধ্যেই ৭০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির একই কারণের পাশাপাশি স্পট মার্কেটে ব্যাপক চাহিদা রুপার দামে এই ঊর্ধ্বগতি ঘটিয়েছে।
স্বাধীন বিশ্লেষক রস নরম্যান বলেন, ‘রুপা বাজারের মজার দিকটি হলো, নেট লং পজিশন তুলনামূলকভাবে কম। অর্থাৎ এটি কেবল অনুমানভিত্তিক র্যালি নয়, বরং বাস্তব মৌলিক চাহিদা দ্বারা প্রভাবিত।’ এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, গাজায় যুদ্ধ শেষ করার তার পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের অধীনে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ট্রাডুর সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক নিকোস জাবোরাস মন্তব্য করেন, ‘গাজার কূটনৈতিক অগ্রগতি ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে বিনিয়োগে নতুন আত্মবিশ্বাস এনে দিচ্ছে, ফলে স্বর্ণের র্যালি কিছুটা বাধার সম্মুখীন হয়েছে। একই সঙ্গে, মার্কিন ডলারের পুনরুদ্ধার সোনার মুদ্রামূল্যকে দুর্বল করছে, যা পতনের ঝুঁকি তৈরি করছে। তবে তেজি ধারা এখনো অক্ষুণ্ণ ও স্বর্ণ নতুন রেকর্ডে পৌঁছানোর সম্ভাবনা উন্মুক্ত।’
মার্কিন ডলার সূচক ডটডিএক্সওয়াই দুই মাসের সর্বোচ্চের কাছাকাছি অবস্থান করছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ডলারে মূল্যায়িত স্বর্ণ আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা, ইউক্রেন যুদ্ধ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক স্বর্ণ কেনা, ইটিএফ প্রবাহ, যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা এবং শুল্কজনিত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এসব মিলেই স্বর্ণের দামের উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে। চলতি বছর স্বর্ণের দাম ৫৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যা ১৯৭৯ সালের তেল সংকটের পর থেকে সর্বোচ্চ বার্ষিক বৃদ্ধির পথে রয়েছে।
বুধবার প্রকাশিত ১৬-১৭ সেপ্টেম্বরের বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, ফেডারেল রিজার্ভ কর্মকর্তারা একমত যে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে ঝুঁকি এতটাই বাড়ছে যে সুদের হার কমানো প্রয়োজন হতে পারে, যদিও স্থায়ী মুদ্রাস্ফীতি তাদের মধ্যে সতর্কতা তৈরি করেছে। অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে বাজার ২৫ বেসিস পয়েন্ট হারে সুদ কমার সম্ভাবনা মূল্যায়ন করছে।
ইউবিএস এক নোটে জানিয়েছে, ‘মার্কিন সরকারের চলমান অচলাবস্থা স্বর্ণের বাণিজ্যে নতুন গতি সঞ্চার করেছে। একই সঙ্গে, জাপান ও ফ্রান্সে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তনের কারণে আর্থিক উদ্বেগও বেড়েছে।’
কম সুদের হার ও বৈশ্বিক অস্থিরতার সময়ে অ-ফলনশীল ধাতু হিসেবে সোনা সাধারণত বেশি লাভজনক হয়ে ওঠে। এফএক্সটিএমের সিনিয়র গবেষণা বিশ্লেষক লুকমান ওতুনুগা বলেন, ‘যদি ঝুঁকির প্রতি আস্থা বাড়তে থাকে, বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে ফিরে যেতে পারেন, ফলে স্বর্ণের দামে স্বল্পমেয়াদে পতন ঘটতে পারে।’
এদিকে, প্ল্যাটিনামের দাম শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৬৪ দশমিক ৪৪ ডলারে এবং প্যালাডিয়ামের দাম ২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে এক হাজার ৪৮০ দশমিক ২২ ডলারে, যা দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর।
সূত্র: রয়টার্স
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন