বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৫, ১১:৪৭ পিএম

ইনানী থেকে পায়ে হেঁটে এভারেস্ট চূড়ায় ইকরামুল

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৫, ১১:৪৭ পিএম

ইনানী থেকে পায়ে হেঁটে এভারেস্ট চূড়ায় ইকরামুল

ছবি- সংগৃহীত

কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত থেকে হেঁটে গিয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেছেন ইকরামুল হাসান শাকিল। নেপাল সময় ১৯ মে সকাল সাড়ে ছয়টায় এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান তিনি। সেদিনই খবরটি নিশ্চিত করে শাকিলের নেপালি ট্রাভেল এজেন্সি ‘এইটকে এক্সপেডিশনস’।

এই গল্প শুধু একটি পর্বতজয়ের নয়, এটি এক অন্তর্নিহিত বিপ্লবের গল্প। ইকরামুল হাসান শাকিলকে 'হাঁটামানব' উপাধি দিলে অত্যুক্তি হবে না। নানা দেশ, ভূপ্রকৃতি, আবহাওয়া ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে প্রায় ১,৪০০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে এই অসাধ্যসাধন করেন তিনি। মানুষের অপ্রতিরোধ্য ইচ্ছাশক্তির এক নিখাদ উদাহরণ হয়ে থাকবেন ইকরামুল। তাঁর এই অভিযানে রয়েছে এক অপার সৌন্দর্য।

এভারেস্ট জয়ের আগে ইকরামুল ‘গ্রেট হিমালয়া ট্রেইল’ অভিযান শুরু করেন হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিমে নেপাল-তিব্বত সীমান্তবর্তী হিলশা গ্রাম থেকে। ২০২৩ সালের ৯ জুলাই কাঞ্চনজঙ্ঘার উত্তর বেজক্যাম্প পাংপেমায় পৌঁছে অভিযান শেষ করেন তিনি।

২০২৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত থেকে ‘সি টু সামিট’ (সমুদ্র থেকে শৃঙ্গ) অভিযানের যাত্রা শুরু করেন শাকিল। এরপর চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা ও মুন্সিগঞ্জ হয়ে ১২ দিনে ঢাকায় পৌঁছান তিনি। কিছুদিন বিরতির পর হাঁটা শুরু করে গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ হয়ে ২৮ মার্চ পৌঁছান পঞ্চগড়ে।

পরদিন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে শাকিল প্রবেশ করেন ভারতে। সেখান থেকে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং হয়ে ৩১ মার্চ নেপালে পৌঁছান তিনি। এরপর হেঁটে প্রায় ১,৪০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ২৯ এপ্রিল এভারেস্ট বেজক্যাম্পে পৌঁছান।

এরপর সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন। ৬ মে থেকে শুরু হয় অভিযানের প্রস্তুতিমূলক রোটেশন। একে একে ক্যাম্প-৩ পর্যন্ত উঠে ১০ মে ফিরে আসেন বেজক্যাম্পে। এরপর ১৬ মে ক্যাম্প-২, ১৭ মে ক্যাম্প-৩ এবং ১৮ মে ক্যাম্প-৪ এ পৌঁছে ১৯ মে ভোরে চূড়ার উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করেন তিনি।

১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ান পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ প্রথমবারের মতো সমুদ্র থেকে হাঁটাপথে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয়ের প্রচেষ্টা নেন। ‘সি টু সামিট এক্সপেডিশন’ নামে সেই অভিযানে তিনি ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ১,২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছান এভারেস্টে। ৩৫ বছর পর সেই অনুপ্রেরণাতেই বাংলাদেশের তরুণ পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল তার অভিযানের নাম দেন ‘সি টু সামিট’ এবং দেশের অন্যতম পর্যটন স্থান কক্সবাজার থেকে শুরু করে জয় করেন এভারেস্ট।

এই অভিযানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল ‘প্রাণ’। সহযোগী হিসেবে ছিল ইউএনডিপি, মিস্টার নুডলস, মাকলু-ই ট্রেডার্স নেপাল ও সিস্টেমা টুথব্রাশ।

পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর মাউন্ট এভারেস্টে প্রথম অভিযান পরিচালিত হয় শতাধিক বছর আগে। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে নিউজিল্যান্ডের পর্বতারোহী এডমন্ড হিলারি ও নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগে প্রথমবারের মতো এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন। ২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহীম। এরপর ২০১১ ও ২০১২ সালে দুবার শৃঙ্গ জয় করেন এম এ মুহিত।

২০১২ সালের ১৯ মে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে নিশাত মজুমদার এভারেস্ট জয় করেন। একই বছরের ২৬ মে শৃঙ্গ জয় করেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। ২০১৩ সালের ২০ মে এভারেস্টজয়ী পঞ্চম বাংলাদেশি সজল খালেদ চূড়া থেকে নামার সময় মৃত্যুবরণ করেন। এরপর প্রায় এক দশক এভারেস্ট জয়ে বাংলাদেশি উপস্থিতি থমকে যায়। ২০২৪ সালে সেই খরা কাটিয়ে ১৯ মে এভারেস্টে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবর আলী। এবার সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করলেন ইকরামুল হাসান শাকিল।

ইকরামুল হাসান পর্বতারোহণের প্রাথমিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে। তিনি সফলভাবে আরোহণ করেছেন হিমালয়ের ‘কেয়াজো-রি’, ‘দ্রৌপদী কা ডান্ডা-২’, ‘হিমলুং’ এবং ‘ডোলমা খাং’ পর্বতশৃঙ্গ। ২০২৩ সালে ‘গ্রেট হিমালয়া ট্রেইল’ নামে পরিচিত নেপালের পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত ১,৭০০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করে আলোচনায় আসেন।

ইকরামুল হাসান শাকিলের বাড়ি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরের ফুলবাড়িয়ায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে শাকিল সবার বড়। গাজীপুরের জনতা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। ২০১৯ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নেন শাকিল। পড়ালেখা ও পরিবারের খরচ চালাতে তিনি একসময় সুপারশপে বিক্রয়কর্মী হিসেবেও কাজ করেছেন। পাশাপাশি ছিলেন নাট্যদল 'পদাতিক নাট্য সংসদ বাংলাদেশ'-এর নাট্যকর্মী।

এই তরুণ পর্বতারোহী এবার সফলতার আনন্দ নিয়ে দেশে ফিরতে চলেছেন।

Link copied!