ঢাকা বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫

বাকপ্রতিবন্ধীর মুখে ভাষা ফোটাল সিআরপি

বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম
সিআরটি। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অবস্থিত সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) ময়মনসিংহ সেন্টারে স্পিচ থেরাপির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে বাকপ্রতিবন্ধী এক নারী কথা বলার সক্ষমতা ফিরে পেয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিআরপি ময়মনসিংহ সেন্টারের স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট সাবরিনা হোসেন তৃষা।

তিনি জানান, ৩৫ বছর বয়সি সুমি নামের ওই নারী দীর্ঘদিন ধরে গ্লোবাল অ্যাফেসিয়া, ওরো-ফ্যারিঞ্জিয়াল ডিসফ্যাজিয়া এবং ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। ফলে তিনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলা, কিছু গিলতে পারা কিংবা নিজের অনুভূতি প্রকাশের মতো মৌলিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে ধাপে ধাপে মোট ১২টি স্পিচ থেরাপি সেশনের মাধ্যমে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়।

জানা যায়, এক রাতে সন্ত্রাসীদের হামলায় মাথায় গুরুতর আঘাত পান ময়মনসিংহের বাসিন্দা সুমি। এর পর থেকেই তার বাকশক্তি, গলাধঃকরণ ক্ষমতা এবং ভাষা প্রকাশের সক্ষমতা হারিয়ে যায়। তখন জনৈক নিউরো-সার্জনরা জানান, তিনি আর কখনোই কথা বলতে পারবেন না।

পরবর্তীতে সুমিকে বাকৃবির সিআরপি ময়মনসিংহ সেন্টারে আনা হলে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্ট সাবরিনা হোসেন তৃষার তত্ত্বাবধানে তার থেরাপি শুরু হয়। চিকিৎসা চলাকালীন ধাপে ধাপে মাত্র তিন মাসেই দৃশ্যমান উন্নতি লক্ষ করা যায়।

এ বিষয়ে থেরাপিস্ট সাবরিনা হোসেন তৃষা বলেন, ‘এই পেশাটি বেছে নিয়েছি কারণ এটি অনন্য এবং নতুন। আমি মনে করি, একজন অনুসন্ধানপ্রবণ ব্যক্তি হিসেবে আমার দক্ষতা এই পেশার জন্য উপযুক্ত। এতে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি বাংলাদেশে এখনও অনেকটাই অজানা একটি ক্ষেত্র। অথচ আমরা যে সমস্যাগুলোর চিকিৎসা করি, যেমন কথা বলা, গিলতে পারা, কণ্ঠস্বর—তা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। দ্রুত থেরাপি শুরু করলে রোগী দ্রুত উন্নতি লাভ করেন।’

তিন মাসের চিকিৎসা শেষে সুমি এখন আবার কথা বলতে পারছেন। প্রথমে ছোট শব্দ, পরে বাক্য, এরপর ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে শুরু করেন তিনি।

থেরাপিস্ট তৃষা মনে করেন, দেশের আরও অনেক গ্লোবাল অ্যাফেসিয়া বা ডিসফ্যাজিয়া রোগীর জন্য এই ঘটনা অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে অনেকেই সুস্থতা লাভ করতে পারেন।

সুমির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি থেরাপিস্ট তৃষা এবং সিআরপি সেন্টারকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।