জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের নিজ দলে আকৃষ্ট করতে চলছে অঢেল অর্থ ব্যয়ের প্রতিযোগিতা।
জাকসু নির্বাচনী আচরণবিধির ১৭(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হল সংসদ নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ ৪০০০ টাকা এবং কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য সর্বোচ্চ ৭০০০ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবতা এই নিয়মের সম্পূর্ণ বিপরীত।
নির্বাচনে বিভিন্ন প্যানেল ও প্রার্থীরা ছয়-সাত হাজার টাকা থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত ব্যয় করছেন। এসব অর্থ মূলত ব্যয় হচ্ছে লিফলেট বিতরণ, অনলাইন প্রচারণা, বিরিয়ানি উৎসবসহ নানা মুখরোচক আপ্যায়নের পেছনে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল সোমবার রাতে বটতলায় ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থীর সমর্থকরা প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে খাবারের আয়োজন করেন। বটতলার রাঁধুনী, তাজমহল হোটেল ও হাবিব ভাইয়ের দোকানগুলোতে প্রতিদিনই ভোটার সমাবেশের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, যা যেন নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘২৫ জনের বেশি শিক্ষার্থীর যেকোনো সভা, সমাবেশ বা আয়োজন নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি অবগত করব, যেন তারা কয়েকটি টিম গঠন করে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী কর্মকাণ্ড বন্ধে ব্যবস্থা নেয়।’
এমনই এক ঘটনায় গত রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের দ্বিতীয় তলার ২১৫ নম্বর কক্ষে দুই জনের বেশি ভোটারকে বিরিয়ানি খাইয়ে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেলের পুরুষ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদপ্রার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ানের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন প্যানেলের শীর্ষ প্রার্থীরা তাদের সমর্থকদের জন্য হাজার হাজার টাকার বাজেট দিচ্ছেন। হলগুলোতে বড় বাজেটে শত শত ভোটারকে আপ্যায়নের মাধ্যমে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চলছে। অনেক সময় ভোটারদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসব প্রোগ্রামে অংশ নিতে বাধ্যও করা হচ্ছে।
আচরণবিধির ১৭(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। তবুও জাকসু নির্বাচন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এসব ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে অঢেল অর্থ ব্যয় অবশ্যই নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী কাজ।’
ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার আহ্বায়ক ও সংশপ্তক পর্ষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদপ্রার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা আশা করেছিলাম, জাকসু নির্বাচনে সবাই আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালাবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে, অনেক প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মাদক ও বিরিয়ানি বিতরণ করছেন। নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি চলছে এবং টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা হচ্ছে, যা স্পষ্টতই নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। ৫ আগস্টের আগের নির্বাচনগুলোর মতোই অনিয়ম আবারও দৃশ্যমান।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছি। আচরণবিধি মেনে চলতে সকল প্রার্থীকে বিশেষভাবে অবগত করা হয়েছে।’

 
                            -20250909205430.jpg) 
                                    


 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন