বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনা ১৪০০ শিশু, কিশোর, তরুণ হত্যা করে এখন ভারতে বসে অডিও বার্তা পাঠিয়ে নাশকতা করার নির্দেশনা দিচ্ছেন। তার নির্দেশেই কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এমনকি একজন পুড়ে মারাও গেছেন। কোনো একটা চোরা রাস্তা দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশে আসার স্বপ্নে বিভোর রয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের হাতে প্রচুর টাকা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু, ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের টাকা তাদের হাতে আছে। সব টাকা আটকানো যায়নি। সেই টাকা খরচ করে তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছেন।
ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হলে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ যেখানে জন্ম ও বিকাশ লাভ করে, সেখানে কোথাও ন্যূনতম গণতন্ত্রের জায়গা থাকে না। ফ্যাসিবাদের ছোবলে নির্বাচন কমিশন, গণতন্ত্র ও তার প্রতিষ্ঠান, সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যখন আক্রান্ত হয়, তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আক্রান্ত হয়। শেখ হাসিনা এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিল। এ সময়ে ক্যাম্পাসগুলোতে কোনো রাজনৈতিক সহাবস্থান ছিল না। আমাদের ছাত্রদলের ছেলেরা চায়ের দোকান বা শ্রেণিকক্ষ কোথাও বসতে পারেনি। গত ১৫ বছর বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলকে এ বিষয়টি ভুগিয়েছে।’
জিয়াউর রহমান এ দেশের মানুষের আত্মপরিচয় নিশ্চিত করেছেন বর্ণনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাহাত্তরের পর থেকেই আত্মপরিচয়ের সংকট তৈরি করছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সবাইকে বাঙালি হয়ে যেতে বলেছিলেন। তাহলে প্রশ্ন আসে, আমরা কোন দেশের বাঙালি, আমাদের চাকমা, মারমা কীভাবে বাঙালি হবে! এর পরিবর্তে জিয়াউর রহমান আনলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এর মধ্যে আমার পাহাড়ী, সমতল, নদী সব চলে আসে। আমাদের এই আত্মপরিচয়ের সংকট নিরসন করলেন জিয়াউর রহমান। এটাকে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে মুছে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তিনি সেটা পারেননি।’
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা সমস্ত রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করে দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিল। পরে জিয়াউর রহমানের সময়ে এসে সবাই তার রাজনীতি করতে পারবেন, তার মত প্রকাশ করতে পারবেন, এই স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এটাই ৭ নভেম্বরের কৃতিত্ব ও মহত্ব, আপনি এটাকে কখনো অস্বীকার করতে পারবেন না।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলের বর্ণনা করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বরের পরেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে শিক্ষা, কৃষি, পররাষ্ট্রসহ সকল খাতে উজ্জল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছিলেন, যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। তার সময়ে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষের অক্ষরজ্ঞান ছিল। যেটা তিনি স্বল্প সময়ে সেটিকে ৪০ শতাংশে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার সময়ে তলাবিহীন ঝুড়ির মতো দেশ চাউল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, যা এখনও চলছে, সেটা তারই এক্সটেনশন। ভালো কিছু করতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না। জিয়াউর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরে এটি করেছেন। বাংলাদেশ প্রশ্নে তিনি আপোষ করেননি, বলেই তাকে জীবন দিতে হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ইতিহাসের স্মৃতিচারণ করে সাবেক এই ছাত্রদল নেতা বলেন, ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে হবিবুর রহমান হলে একটি কক্ষে ছাত্রদল গঠন করা হয়। সময়ের পরিক্রমায় এরশাদের আমলে আমরা মাত্র ১২/১৩ জন মিলে ঝটিকা মিছিল দিয়ে সামরিক আইন ভেঙেছি। এর পরেই ছাত্রদল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর ছাত্রসংগঠন হিসেবে পরিণত হয়। ৮০ সালের রাকসু নির্বাচনে আমরা একটি সিটও পাইনি। তবে ৯০ সালে শান্তিপূর্ণ রাজনীতি ও ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে সবগুলো পদে নির্বাচিত হয়েছি।
জ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনাই ছাত্রসংগঠনের কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে গনতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হলে, যারা শিক্ষার পরিবেশ এবং রাজনীতির চর্চা করতে চায়, সেই সংগঠন বিকাশ লাভ করে। ছাত্ররাজনীতির মূল কাজ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হবেন, তাদেরই সেই দায়িত্ব থাকবে। তারা সেই দায়িত্ব পালন না করলে শিক্ষাবহির্ভূত কার্যক্রম শুরু হবে।
এ সময় প্রধান বক্তার বক্তব্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, বাংলাদেশকে যারা তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, তাদের সবার পরাজয় হয়েছে ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। আমাদেরকে ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন জানতে হবে, তেমনি আমাদের সার্বভৌমত্ব ফেরত পাওয়ার দিন ৭ নভেম্বর সম্পর্কে জানতে হবে।
চার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিপি-জিএসদের দেখেছি, তাদের নির্বাচিত হওয়ার জন্য যেন বিগত দিনে ছাত্রলীগের খাতায় নাম থাকতে হবে। ছাত্রদল ন্যায় ও গণতন্ত্রের পথে কোনো সময় আপোষ করেনি। তারা প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। এই চার নির্বাচনে হয়ত ছাত্রদল পরাজিত হয়েছে। তবে এই পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগোতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, বিগত ৫ দশকের ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমাদের ন্যায়ের লড়াই প্রকাশ্যে চলমান থাকবে।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী। এ সময় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল হকের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, ইউট্যাব রাবি শাখার সভাপতি অধ্যাপক মামুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসনে, জাতীয়তাবাদী শাখিক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলীম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমরিুল ইসলাম, জীয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক হবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফরিদুল ইসলাম ও ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ডাক্তার আওয়াল প্রমুখ।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন