ঢাকা শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৫

ভূমিকম্পে রাবির শেরে বাংলা হলে ফাটল, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৫, ০৫:১৮ পিএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা ফজলুল হক হলে ফাটল। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ভূমিকম্পে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের একটি অংশ হেলে পড়েছে বলে জানিয়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া হলের দেওয়ালে নতুন করে ফাটল দেখা দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে ও হল পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন হলের শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮-এ ভূমিকম্পের পরেই হলের প্রধান ফটকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে  উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন ও প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং হল পরিদর্শনের আশ্বাস দেন। 

পরে প্রশাসন হলটি পরিদর্শন করে। এ সময় রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, এজিএস এস এম সালমান সাব্বিরসহ ছাত্র সংসদের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধিও হল পরিদর্শনে আসেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলটি অনেক পুরোনো এবং সাম্প্রতিক সময়ে বেহাল দশায় ছিল। খসে পড়েছিল হলের বিভিন্ন জায়গার ছাদের পলেস্তারা। আজকের ভূমিকম্পের পর হলের পশ্চিম ব্লকের একাংশ হেলে পড়েছে। অথচ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অজুহাত দেখাচ্ছে। তারা দ্রুত অন্য কোথাও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।

খালিদ আল হাসান হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঘুম থেকে ওঠার পরই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এরপর দেখি হলের পশ্চিম ব্লকের একাংশ একপাশে দেবে গেছে। আমরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের কথাবার্তা ছিল হতাশাজনক। তারা আমাদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বোঝাচ্ছেন। আমাদের জীবনের মূল্যের চেয়ে কি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বড়? আমরা যে ৩০০ ছাত্র এখানে আছি, তারা কোথায় যাব?’

তিনি আরও বলেন, ‘হল প্রাধ্যক্ষ স্যার ভূমিকম্পের প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা পর এসেছেন। প্রশাসনের কাছে আমাদের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? ভূমিকম্পে যদি ভবন ধসে কোনো প্রাণহানি হতো, তার দায়ভার কে নিত? আমরা অবিলম্বে নিরাপদ কোনো স্থানে আমাদের স্থানান্তরের দাবি জানাচ্ছি।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের ফাটল ধরা কিছু অংশ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন জেমস বলেন, ‘১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হলটি কাঠামোগতভাবেই দুর্বল। এখানে কোনো আরসিসি কলাম নেই, ইটের পিলারের ওপর ছাদ। ভূমিকম্পের সময় মনে হচ্ছিল ছাদ ভেঙে পড়বে। বিভিন্ন রুমের পলেস্তারা খসে পড়ছে। আমরা ১০ ফুট ওপর থেকে ধসে পড়ার আতঙ্কে আছি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আমাদের সন্তানের মতো বিবেচনা করে আজ রাতেই যেন নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়।’

রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ হল প্ররিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত কয়েক মাস যাবৎ এই হলের শিক্ষার্থীরা তাদেরকে স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু প্রশাসনের কোনো কর্মতৎপরতা দেখা যায়নি। আমরা প্রশাসনকে জুমার নামাজ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিচ্ছি। আপনারা জুমার নামাজ শেষে বসে সিদ্ধান্ত নিন।

ভূমিকম্পের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানকে নিয়ে হল পরিদর্শনে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন। পরিদর্শন শেষে উপ-উপাচার্য বলেন, ‘ইতিপূর্বেও উপাচার্য মহোদয়সহ আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং টিম নিয়ে এই হল পরিদর্শন করেছিলাম। তখনই মনে হয়েছিল বিল্ডিংটা একটু হেলে গেছে এবং বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। আজকের ভূমিকম্পের পর অবস্থা আরও খারাপ মনে হচ্ছে। বিষয়টি গভীর এবং সহজ নয়। আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং টিমকে টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্টের দায়িত্ব দিয়েছি।’

শিক্ষার্থীদের পুনর্বাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখনই হলটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হবে কি না সে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। জুমার নামাজের পর উপাচার্য মহোদয়সহ আমরা জরুরি বৈঠকে বসব। যদি পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয়, তবে এই ৩০০ ছাত্রকে কীভাবে পুনর্বাসন করা যায়, সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে শেরে বাংলা ফজলুল হলের প্রাধ্যক্ষ মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সরজমিনে দেখে নিশ্চিত হয়েছি যে হলটি নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ। এই অবস্থায় ছাত্ররা বা আমরা কেউ নিরাপদ নই। ছাত্রদের পরীক্ষা ও টিউটোরিয়াল চলছে, তাই হুট করে হল বন্ধ করে দেওয়া বা তাদের বাড়ি পাঠানো সম্ভব নয়। জুমার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসন যৌথভাবে বসে ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত স্থানান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সেই পর্যন্ত ছাত্রদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।’