ছাত্ররাজনীতি চাওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে হুংকার দিয়েছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সমন্বয়ক আশিকুর রহমান আশিক। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি চাওয়া শিক্ষার্থীদের বোরকা পড়ে দেয়াল টপকাইয়া পালাতে হবে।’
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গ্রুপে পোস্ট করে তিনি এ ‘হুমকি’ দেন।
তিনি পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘রাজনীতি বন্ধ চাওয়াতে নাকি নব্য কিছু কুরুত বাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হুমকি দিচ্ছে। তারা নাকি বলতেছে, কিছুদিন পরে তারা ক্ষমতায় আসলে তাদের দেখে নেবে,তাদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেবে না।’
‘এই বিপ্লবের পরও দেখতেছি সব এক। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এসব নব্য রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে বলছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা শিক্ষার্থীর গায়ে ফুলের টোকা পড়লে আপনাদের অবস্থা পোমেল, টগর, কুরুত বাবুলের মতো হবে। বোরকা পরে মেয়েদের হলের দেয়াল টপকাইয়া পালাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির কোনো স্থান হবে না। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাই।’
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ছাত্রদল নেতা জহির রায়হান বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে কুখ্যাত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছাত্রদলের নীতি-আদর্শকে বুকে ধারণ করে প্রকাশ্যে সব ক্যাম্পাসে আমরা রাজনীতি করেছি। আমরা ছাত্রদল বিগত সাড়ে ১৫ বছরে একটি দিনের জন্যও আমাদের পরিচয় লুকিয়ে কোনো ক্যাম্পাসে প্রবেশ করিনি। এ ছাত্রদল বিগত সাড়ে ১৫ বছরে একটি দিনের জন্যও ছাত্রলীগ কিংবা ফ্যাসিস্টদের দোসরদের সঙ্গে হাত মেলায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা গুম হয়েছে, খুন হয়েছে। আমাদের ভাইদের সরাসরি গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও তার সহকর্মীরা ভয় পেয়ে রাজপথ ছেড়ে যায়নি। আমরা সেই ধরনের ফ্যাসিস্টদের মোকাবিলা করে আজ হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে আমরা বসবাস করি। আমরা ক্যাম্পাস থেকে পালাব কেন? আমরা তো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়েই রাজনীতি করব। পালাবে তারা, ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করবে।’
এ ব্যাপারে বেরোবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন বলেন, ‘নামধারী সমন্বয়কদের এমন পোস্ট ফ্যাসিবাদের বহিঃপ্রকাশ। এরা বিগত সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে এসেছে। এখন ক্যাম্পাসে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চাচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের অনেক আগেই বয়কট করেছে। রাজনীতি করা একজন মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। এটা হরণ করার অধিকার কারো নেই। আমরা চাই প্রশাসন যাতে দ্রুত ছাত্ররাজনীতির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।’
ছাত্রশিবির সভাপতি সুমন সরকার বলেন, ‘যিনি হুমকি দিয়ে পোস্ট দিয়েছেন, তিনিসহ কয়েকজনের ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এখন আবার তারাই গলাবাজি করছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য প্রক্টর এবং ছাত্র উপদেষ্টা অফিসে শাড়ি-চুড়ি রেখেছে তারা। কাজটি মোটেও ঠিক হয়নি।’
উল্লেখ্য, ২০ জুলাই বিকেল ৫ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছাত্ররাজনীতির অভিযোগ তুলে আশিকুর রহমান আশিক, শামসুর রহমান সুমন, আরমান হোসেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) রংপুর মহানগর সদস্যসচিব হাজিমুল হক ও রংপুর জেলা কমিটির মুখপাত্র রুম্মানুল ইসলাম রাজ প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার চেয়ারে শাড়ি-চুড়ি রাখেন।
এ ঘটনার পরপরই শিক্ষকদের এবং নারীদের অবমাননার অভিযোগ এনে বিক্ষোভ মিছিল করে বেরোবি শাখা ছাত্রদল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।