ঢাকা বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫

মাহেরীন চৌধুরীর সাহস কখনো ভোলা যাবে না: মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৪:১০ পিএম
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী। ছবি- সংগৃহীত

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম। বিশেষভাবে তিনি স্মরণ করেছেন শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীকে, যিনি নিজের জীবন বাজি রেখে একের পর এক শিক্ষার্থীকে আগুন ও ধোঁয়ার মধ্য থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেন এবং পরিশেষে নিজেই প্রাণ হারান।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা লেখেন আনোয়ার ইব্রাহিম।

তিনি আরও লেখেন, ‘মাহেরীন চৌধুরীর অসাধারণ সাহস ও আত্মত্যাগ কখনোই ভোলা যাবে না।’

দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোদের অধিকাংশই ছিল শিশু এবং আহত হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ—উল্লেখ করে আনোয়ার ইব্রাহিম জানান, এই মর্মান্তিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে সংহতি জানানোর জন্য তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি লিখবেন।

তিনি আরও জানান, এই শোকের মুহূর্তে আমরা বাংলাদেশের ভাই-বোনদের পাশে আছি। প্রতিটি হারানো প্রাণ, প্রতিটি ক্ষতবিক্ষত পরিবারের প্রতি আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় চারদিকে যখন শোকের মাতম, তখনই উঠে আসে মাহেরীন চৌধুরীর আত্মত্যাগের গল্প। সেই গল্পে চোখ পড়তেই আবার স্তম্ভিত হয়েছেন সবাই। দুর্ঘটনায় ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে নিজে প্রাণ হারিয়েছেন শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী।

গত সোমবার রাতে শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান।

জানা যায়, মাহেরীন চৌধুরী প্রেসিডেন্ট শহিদ জিয়াউর রহমানের চাচাতো ভাই এম আর চৌধুরীর মেয়ে। কয়েক বছর আগে তিনি প্রথমে তার পিতা এবং এরপর মাকে হারান। তার দুই ছেলে আছেন। তিনি মাইলস্টোনে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকর্মী সূত্রে জানা গেছে, বিমান বিধ্বস্তের পর চারদিক যখন আগুন ও ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়, তখন শিক্ষিকা মাহেরীন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেন। দ্রুততার সঙ্গে আতঙ্কিত শিশুদের বের করার চেষ্টা করেন। তার প্রচেষ্টায় অন্তত ২০ শিক্ষার্থী অক্ষত বা সামান্য আহত অবস্থায় ভবন থেকে বের হতে পেরেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই দুঃসাহসিক কাজ করতে গিয়েই নিজে আটকা পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয় তার।

এক অভিভাবক বলেন, ম্যাডাম অনেক ভালো ছিলেন। সেনাবাহিনী আমাদের বলেছে, ওই ম্যাডামের জন্য অন্তত ২০ শিক্ষার্থী বেঁচে গেছে।

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরীপাড়ার মেয়ে মাহেরীন চৌধুরী ছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন আদর্শ শিক্ষিকা।

তার স্বামী মনসুর হেলাল জানান, নিজ গ্রাম জলঢাকার বোগলাগাড়ী চৌধুরীপাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয় মাহেরীনকে।