সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ভিডিও আর ছবিই বদলে দিয়েছিল ‘বেবিডল আর্চি’ নামে এক ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলের ভাগ্য। কয়েকদিনের মধ্যেই তার অনুসারীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে পৌঁছায় ১৪ লাখে।
লাল শাড়ি পরে রোমানিয়ান গানের তালে নাচের একটি ভিডিও এবং অ্যাডাল্ট তারকা কেন্দ্রা লাস্টের সঙ্গে একটি ছবিতে পোজ দেওয়া- এই দুটো পোস্ট থেকেই শুরু হয় আলোচনার ঝড়।
ইন্টারনেটজুড়ে কৌতূহল বাড়তে থাকে এই ‘আর্চি’কে ঘিরে। গুগলে নামটি ট্রেন্ড করে, তৈরি হয় অসংখ্য ফ্যানপেজ ও মিম। কিন্তু এরপরই ঘটে চমক। প্রকাশ্যে আসে এক বিস্ময়কর তথ্য—এই অনলাইন সেনসেশনের পেছনে বাস্তবে কোনো নারীই ছিলেন না।
‘বেবিডল আর্চি’ নামের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি ছিল সম্পূর্ণ ভুয়া। বাস্তবের একজন পুরুষই ছিলেন এর নির্মাতা। এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয়, বিশ্বাসযোগ্যতা ও কৃত্রিম জনপ্রিয়তা নিয়েও।
তবে অদ্ভুদভাবে সেখানে ব্যবহার করা চেহারার সঙ্গে বাস্তবজীবনের এক নারীর চেহারা মিলে যায়। ঘটনার পর্দা ফাঁস হয় সাঁচীর ভাই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার পর। তদন্তে বেরিয়ে আসে, এই ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করেছিলেন সাঁচীর প্রাক্তন প্রেমিক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রীতম বোরা। গ্রেপ্তার করা হয় তার তাকে।
তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা সিজল আগরওয়াল জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপড়েন থেকেই প্রতিশোধ নিতে বোরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সাঁচীর চেহারার মতো দেখতে একটি ডিজিটাল চরিত্র তৈরি করেন। প্রথমদিকে ব্যবহার করা হয় সাঁচীর আসল ছবি, পরে এআই টুলস ও ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো হয় সম্পূর্ণ ডিজিটাল কনটেন্ট।
২০২০ সালে তৈরি হওয়া ওই ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলটি ২০২১ সালের মে মাসে প্রথমবার কনটেন্ট আপলোড করে। এরপর ধীরে ধীরে এআই ইমেজ, ভিডিও ও চ্যাটজিপিটির সহায়তায় সাজানো হতে থাকে পুরো প্রোফাইল। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।
১১ জুলাই রাতে সাঁচীর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশে একটি সংক্ষিপ্ত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়, সঙ্গে কিছু ছবি ও ভিডিওর প্রমাণও দেওয়া হয়। তাতে কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও তদন্তে প্রীতম বোরার নাম উঠে আসে।
ইনস্টাগ্রামের কাছে তথ্য চেয়ে পুলিশ জানতে পারে, এই প্রোফাইলের পেছনে আছেন বোরা। এরপর সাঁচীর সঙ্গে প্রীতম বোরার পরিচয় নিশ্চিত করে ১২ জুলাই সন্ধ্যায় তিনসুকিয়া জেলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ তার মোবাইল, ল্যাপটপ, হার্ড ড্রাইভ ও ব্যাংকের নথিপত্র জব্দ করেছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বেবিডল আর্চি প্রোফাইলের মাধ্যমে লিংকট্রি প্ল্যাটফর্মে প্রায় ৩ হাজার সাবস্ক্রিপশন ছিল এবং বোরা অন্তত ১০ লাখ টাকা আয় করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়ার আগের মাত্র পাঁচ দিনেই তার আয় ছিল প্রায় ৩ লাখ টাকা।
পুলিশ কর্মকর্তা আগরওয়াল বলেন, ‘এই ঘটনার কারণে সাঁচী ভীষণ মানসিক চাপে ছিলেন, তবে এখন তিনি ও তার পরিবার কাউন্সেলিং নিচ্ছেন এবং ভালো আছেন।’
তবে মেটা সাধারণত নগ্নতা বা যৌন বিষয়বস্তু পোস্ট করার অনুমতি দেয় না। গত মাসে সিবিএস-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে মেটা সেই সমস্ত এআই টুলের বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিয়েছে যার সাহায্যে বাস্তব জীবনে মানুষের ছবি ব্যবহার করে যৌনতাপূর্ণ ডিপফেক যুক্ত কন্টেন্ট বানানো যায়।
বেবিডল আর্চির নামে ওই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট এখন আর জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ নয়। সেখানে ২৮২টা পোস্ট ছিল।
যদিও সামাজিক মাধ্যমে তার ফটো এবং ভিডিওতে ভরা এবং একটা ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে সেগুলোর সব কটাই মজুদ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
বিবিসি মেটার কাছে জানতে চেয়েছে, এই বিষয়ে তাদের কী পরিকল্পনা রয়েছে। এই বিষয়ে বিবিসির প্রশ্নের জবাব দেয়নি মেটা।