ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে প্রায় ২৮৪০ কোটি টাকার বিশাল প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
রোববার (২৭ জুলাই) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ প্রকল্পসহ মোট ১২টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, যার মোট ব্যয় ৮ হাজার ১৪৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনুমোদিত এই প্রকল্পের নাম ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’। জুলাই ২০২৫ থেকে জুন ২০৩০ মেয়াদে ধাপে ধাপে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সভায় প্রকল্পটির বিস্তারিত উপস্থাপন করেন।
যা থাকছে এই প্রকল্পে:
মোট ৪১টি বহুতল ভবন নির্মাণ, যার মধ্যে থাকবে—
- ১৬টি নতুন আবাসিক হল
- ৮টি অ্যাকাডেমিক ভবন
- ৯টি হাউজ টিউটর আবাসিক ভবন
- ১২তলা মাল্টিপারপাস ডাকসু ভবন
- ২০তলা ও ৪তলা প্রশাসনিক ভবন
- ৬তলা মেডিক্যাল সেন্টার
- গ্যালারি, ডরমিটরি ও আধুনিক খেলার মাঠ উন্নয়ন
৮টি অ্যাকাডেমিক ভবন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৮টি নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পশ্চিম ও উত্তর পাশে অবস্থিত পুরাতন ভবন ভেঙে একটি ১২ তলা ও একটি ৬ তলা ভবন হবে।
আইএসআরটি ও ফার্মেসি বিভাগের জন্য বর্তমান আইএসআরটি ভবন ভেঙে, মোকাররম হোসেন খন্দকার বিজ্ঞান ভবন ও আইএসআরটির মধ্যবর্তী খালি জায়গায় একটি ১০ তলা ভবন তৈরি হবে। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের জন্য আলাদা ৩ তলা ভবনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
চারুকলা অনুষদের অধীনে ক্র্যাফট, স্কাল্পচার, গ্রাফিকস, সিরামিকস, ইতিহাস ভবন এবং থিওরেটিক্যাল শিক্ষক লাউঞ্জ ভেঙে সেখানে একটি ৫ তলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে।
বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের একতলা ভবন ভেঙে সেখানে ১০ তলা বিশিষ্ট ‘বীর উত্তম শহিদ খাজা নিজামুদ্দিন ভূঁঞা এমবিএ টাওয়ার’ নির্মিত হবে। পাশাপাশি প্রেস বিল্ডিং ও নীলক্ষেত পুলিশের টিনশেড ফাঁড়ি ভেঙে যথাক্রমে ১১ তলা ও ৫ তলা বিশিষ্ট দুটি প্রেস কাম অ্যাকাডেমিক ভবন তৈরি হবে।
ছাত্রদের ১০টি আবাসিক ভবন:
ছাত্রদের আবাসিক সংকট মেটাতে ১০টি নতুন আবাসিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পুরাতন টিনশেড ভবন ভেঙে সেখানে ১,৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১২ ও ৮ তলা দুটি ভবন হবে।
মাস্টার দা সূর্যসেন হলের উত্তর অংশ ভেঙে ১,১০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১১ তলা একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের শহিদ আতাউর রহমান খান খাদিম ভবন ও ক্যাফেটেরিয়া ভেঙে ১,২০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১৫ ও ৬ তলা দুটি ভবন গড়ে তোলা হবে।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের টিনশেড ও একতলা ভবন ভেঙে সেখানে ১,০০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১২ ও ৬ তলা দুটি ভবন নির্মিত হবে। ড. কুদরাত-ই-খুদা হোস্টেলের পুরাতন বাংলো ভেঙে ৫০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১০, ৮ ও ৫ তলা তিনটি ভবন তৈরি হবে। প্রতিটি হলেই আবাসিক শিক্ষকদের জন্য ২০টি ফ্ল্যাটসহ ১১ তলা বিশিষ্ট শিক্ষক কোয়ার্টার নির্মাণ করা হবে।
ছাত্রীদের ৬টি আবাসিক হল ভবন:
ছাত্রীদের আবাসিক সমস্যা দূর করতে ৬টি নতুন হল নির্মাণ করা হবে। শাহনেওয়াজ হোস্টেল ভেঙে আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধাসহ ১,০০০ ছাত্রীর জন্য ১৫ তলা একটি ভবন হবে। শামসুন নাহার হলের মধ্যে বিদ্যমান হাউজ টিউটর কোয়ার্টার ও গ্যারেজ ভেঙে ৬০০ ছাত্রীর জন্য ১০ ও ৬ তলা দুটি সম্প্রসারণ ভবন গড়ে তোলা হবে।
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের স্টাফ কোয়ার্টারের ‘বি’ ও ‘ডি’ ভবন ভেঙে সেখানে ৫০০ ছাত্রীর জন্য ১১ ও ৮ তলা দুটি হল নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের ভেতরে প্রভোস্ট বাংলো, হাউজ টিউটর কোয়ার্টার ও তিন তলা সিকদার মনোয়ারা ভবন ভেঙে ৫০০ ছাত্রীর জন্য ১০ তলা সম্প্রসারণ ভবন করা হবে। প্রতিটি হলে আবাসিক শিক্ষকদের জন্য ২০টি ফ্ল্যাটসহ ১১ তলা শিক্ষক কোয়ার্টারও নির্মাণ করা হবে।
শিক্ষকদের আবাসিক ভবন
শিক্ষকদের আবাসনের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মাস্টার দা সূর্যসেন হল এবং হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের বর্তমান প্রভোস্ট বাংলো ভেঙে সেখানে দুইতলা বিশিষ্ট উপ-উপাচার্যের বাংলো নির্মাণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ফুলার রোড আবাসিক এলাকার ১২ ও ১৩ নম্বর ভবন ভেঙে ১৫ তলা বিশিষ্ট একটি আবাসিক ভবন তৈরি হবে, যেখানে মোট ১১২টি ফ্ল্যাট থাকবে।
১২ তলা ডাকসু ভবন
ডাকসু ভবন ভেঙে সেখানে ১২ তলা মাল্টিপারপাস ডাকসু ভবন নির্মাণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উত্তর-পশ্চিম অংশ ভেঙে ২০ তলা একটি ভবন এবং দক্ষিণ-পূর্ব অংশ ভেঙে চারতলা একটি প্রশাসনিক ভবন গড়ে তোলা হবে। জিমনেসিয়ামের জন্য প্রি-ইঞ্জিনিয়ারড ভবনের বাকি কাজও সম্পন্ন করা হবে।
বদলে যাবে খেলার মাঠ
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আধুনিক ক্রীড়া সুবিধা গড়ে তোলার জন্য গ্যালারি, খেলার মাঠ, বাস পার্কিং, পরিচালকের অফিস এবং খেলোয়াড়দের ডরমিটরি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। মূল খেলার মাঠের আয়তন ১০,৯০০ বর্গমিটার, গ্যালারি ২,০৪০ বর্গমিটার, বাস পার্কিং ২,৯০০ বর্গমিটার এবং পরিচালকের অফিস ও ডরমিটরি মিলিয়ে ৪,০৩২ বর্গমিটার স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।
শিববাড়ী আবাসিক এলাকার পুরানো চতুর্থ শ্রেণির ভবনগুলো ভেঙে সেখানে ছয়তলা শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিক্যাল সেন্টার ভবন নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান একতলা মসজিদুল জামিয়া ভবন ভেঙে চারতলা মসজিদুল জামিয়া কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জলাধার সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি রোড নেটওয়ার্ক ও সার্ভিস লাইন স্থাপন, প্রায় ২৪,৮২০ মিটার দীর্ঘ ড্রেনেজ সিস্টেম নির্মাণ এবং আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ওয়েস্ট বিনসহ) ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ও জগন্নাথ হলে পাবলিক টয়লেটও বসানো হবে।