ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

ছাত্রদলের ১১ সদস্যের কমিটিতে ৭ জনই অছাত্র

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ১০:১৮ পিএম
রাবি ছাত্রদলের সভাপতি রাহী ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

দীর্ঘ চার বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চলার পর গত ২৯ জুলাই বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটির ১১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। নবগঠিত কমিটির ১১ সদস্যের মধ্যে ৭ জনেরই নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই।

ছাত্রত্ব দেখাতে তারা অনেকেই বিভিন্ন সান্ধ্য মাস্টার্স ও ভাষা শিক্ষার শর্ট কোর্সে ভর্তি আছেন। কমিটির সভাপতি ছাত্রত্ব দেখাতে সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্সের একটি কোর্সে ভর্তি হলেও তিনি সেটি সম্পন্ন করতে পারেননি। এ দিকে ছাত্রত্ব দেখাতে সাধারণ সম্পাদক কমিটি ঘোষণার দিনই ভাষাশিক্ষার একটি শর্ট কোর্সে ভর্তি হয়েছেন।

রাবি শাখা নবগঠিত কমিটির সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিভাগটি থেকে তিনি ২০১৭ সালের নভেম্বরে এমবিএ শেষ করেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। তবে বিভাগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিভাগটিতে তার ছাত্রত্ব নেই। সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্সের কোর্সে ভর্তি হলেও তিনি সেটি সম্পন্ন করতে পারেননি। তার বাসা রাজশাহী বোয়ালিয়া থানার হোসেনিগঞ্জে।

দায়িত্ব পাওয়া সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলামের পড়াশোনাও শেষ হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ছাত্রত্ব দেখাতে কমিটি ঘোষণার দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশিক্ষার একটি শর্ট কোর্সে তিনি ভর্তি হয়েছেন। আগের কমিটিতে তিনি যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বাসা পাবনার সাথিয়া উপজেলায়।  
 
সন্ধ্যাকালীন বা ভাষা শিক্ষার কোর্সের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শিক্ষার্থী বলার সুযোগ নেই উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্ট্রার এ এইচ এম আসলাম হোসেন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৯ টি বিভাগ এবং দুইটি ইন্সটিটিউটে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চলমান শিক্ষার্থীর বাইরে কাউকে নিয়মিত শিক্ষার্থী বলার সুযোগ নেই। যারা সন্ধ্যাকালীন বা ভাষা শিক্ষার কোর্সে ভর্তি আছেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী মতো মেডিক্যাল, হল, বাস বা কনভোকেশনের সুযোগ পান না।’

ছাত্রদলের খসড়া গঠনতন্ত্রের ৬.১-এর খ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের নাগরিক এবং অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীবৃন্দই কেবলমাত্র জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সদস্য/সদস্যা হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।’
 
যাদের নিয়মিত ‘ছাত্রত্ব’ নেই

মঙ্গলবার বিকেলে ঘোষিত এ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহসভাপতি, ২ জন সহসভাপতি, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই। ছাত্রদলের নতুন কমিটির ১১ সদস্যের মধ্যে ৭ জনের নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই। এদের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রায় এক দশক আগে পড়াশোনা শেষ করেছেন।

নতুন কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া শাকিলুর রহমান সোহাগ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাবিহা আলম মুন্নি ছিলেন যথাক্রমে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ এবং আইন বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী। সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ফার্সি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের হয়ে পড়াশোনা শেষ করা তাহের রহমান হয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

ছাত্রত্ব আছে ৪ নেতার

ঘোষিত কমিটিতে জায়গা পাওয়া ৪ নেতার নিয়মিত ছাত্রত্ব আছে। তারা হলেন, সহসভাপতি লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাঈম তুহিনা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীত বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা ও দপ্তর সম্পাদক আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী নাফিউল জীবন। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিঠু সম্প্রতি ‘মানবিক’ কারণ দেখিয়ে ছাত্রত্ব ফিরে পেয়েছেন। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই সময় ড্রপ আউট হয়ে ছায়ত্ব হারিয়েছিলেন তিনি।

কমিটিতে জায়গা না পাওয়া পদপ্রত্যাশী দুজন ছাত্রদল নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘দীর্ঘ চার বছর পর কমিটি হলো। তবে এই কমিটিতে আমাদের বেশিরভাগ নেতাকর্মীই সন্তুষ্ট নয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা পেতে এই কমিটি খাপ খাওয়াতে পারবে না। সিনিয়রদের পুরস্কারসরূপ কমিটিতে বড় পদ দেওয়া হয়েছে। নতুন সভাপতি রাহী ভাইয়ের ওপর সব নেতাকর্মীর ক্ষোভ আছে। সে অন্যান্য ছাত্রদল নেতার ভালো কাজের ক্রেডিট নিজের নামে ব্যবহার করে কেন্দ্রে নিজের অবস্থান দেখিয়েছেন।’

এ বিষয়ে নব্য সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘কমিটিতে ১১ জনের মধ্যে ৭ জন নেতার নিয়মিত স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ হয়েছে। তবে এই ৭ জন নেতার মধ্যে কেউ কেউ এমফিল, সান্ধ্যে মাস্টার্স ও শর্ট কোর্সে ভর্তি আছেন। তাই আমাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়নি। ছাত্রলীগের নিপীড়নের কারণে আমি যথাসময়ে পরীক্ষায় বসতে পারিনি। আমি নিয়মিত মাস্টার্স শেষে সাংবাদিকতা বিভাগে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্সে ২০১৯ সালে ভর্তি হলেও স্বৈরাচারী সরকারের ক্যাডারদের নির্যাতনে সেটি শেষ করতে পারিনি। রাজপথে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের পুরস্কার হিসেবে আমাদের কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। কমিটিতে নিয়মিত ৪ শিক্ষার্থীও পদ পেয়েছেন।’

অছাত্র দ্বারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠনের বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, ‘বিশেষ কারণ ও বিশেষ পরিস্থিতির কারণে আমাদের এই কমিটি দেওয়া হয়েছে। সাত জনের নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই এই বিষয়টি আমরা অবগত নয়। তবে কয়েকজনের নিয়মিত পড়াশোনা শেষ হয়েছে। তারা এখন অন্যান্য কোর্সে ভর্তি আছে। এই কমিটি খুব স্বল্প সময়ের জন্য বিশেষ কারণে করা হয়েছে। দ্রুতই নিমমিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও হল কমিটি দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’