বাংলাদেশে আগামীতে অনেক ধরনের রাজনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘সেই সংকট থেকে আগামীতে ওয়ান-ইলেভেনের কিংবা ফ্যাসিবাদের পরিস্থিতির দিকে আমাদের নিয়ে যাওয়া হতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন হবে, কেউ সরকারে যাবে, অন্যরা বিরোধী দলে—পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলেও এখনো শঙ্কা কাটেনি।’
রোববার (১০ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৬টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আঠারো থেকে চব্বিশ, কোটা সংস্কার থেকে রাষ্ট্র সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নুরুল হক এসব বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদ এ সভার আয়োজন করে।
নুরুল হক নুর বলেন, ‘এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় যদি লক্ষ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। যখন ছাত্রসংগঠনগুলো সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠন করেছিল তখন রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এখন যদি আসল কথা বলি, অনেকের সাংগঠনিক শক্তি, জনশক্তি আমার বিরুদ্ধে নানান প্রপাগান্ডা ছড়াবে।’
চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সব নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের জবাব যদি আপনাদের শোনাই, আপনারা এখন তাদের থুথু দেবেন। কিন্তু আমি চাই না ওই কথা বলে তাদেরকে নতুন করে লজ্জায় ফেলতে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আপনারা ১৯ জুলাইয়ের বিভৎসতা সম্পর্কে জানেন। সেই পরিস্থিতির পরেও যদি আমরা কিছু না করতে পারি তাহলে আমাদেরকে ভয় নিয়ে এ দেশে বাস করতে হবে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলো আর বসে থাকবেন না, সিদ্ধান্ত নিন।’
তিনি আরও বলেন, “বরিশালের আঞ্চলিক এক বড় নেতা বললেন, ‘তোমাগো কি খাইয়া-দাইয়া কাম নাই, খালি সরকার পতন খুঁজো সব জায়গায়, কোটার মধ্যেই থাকো।’ আমরা যে একদফায় যাব, এটায় তিনি একমত নন। এ রকম আরও অনেকেই সরকারের পতনের একদফায় একমত হননি।”
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রসংগঠনগুলোকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে উল্লেখ করে নুরুল হক নুর বলেন, ‘নব্বইয়ের দশক থেকে ফ্যাসিবাদ আমল পর্যন্ত অস্ত্রের ঝনঝনানি, পেশিশক্তি এবং আধিপত্যের রাজনীতির বিপরীতে সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশ ও সৃজনশীল মেধাভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চার পদক্ষেপ নিতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখি নাই। কারণ তারা ছাত্রসংগঠনগুলোকে রাজনীতিতে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মেধাবীদের পরিবর্তে তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য একদল গুন্ডার হাতে ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্ব তুলে দিয়েছে, যার জন্য ছাত্ররাজনীতি তরুণদের কাছে ঘৃণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্ররাই আমার ভরসা। তারাই যেকোনো সংকটে লড়াই করেছে, তারাই জীবন দিয়েছে। আগামীতেও ছাত্রদের সজাগ থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ২০১৮ সালের কোটার সংস্কার আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল শাহারিয়া শুভর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি মেহেদী হাসান মারুফ। অনুষ্ঠানে গণঅধিকার পরিষদ ও ছাত্র অধিকার পরিষদের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
