বহুল কাঙ্ক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। দীর্ঘবিরতির পর আয়োজিত ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে এই ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনে নিজ নিজ কেন্দ্রে এসে ভোট দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিতে মরিয়া শিক্ষার্থীরা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে ভোটার শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন। সবাই উৎফুল্ল এবং আনন্দ চিত্তে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রবেশপথগুলোতে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীর বাইরে কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারছেন না। সাংবাদিকেরা ও ডাকসু নির্বাচনের নির্ধারিত পাসে প্রবেশ করছে। চারিদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে সতর্কতাবস্থানে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১০টি প্যানেল অংশ নিয়েছে। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন প্রার্থীদের আরেকটি অংশ। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা পরিবর্তনগুলো টেকসই রূপ পাবে, ছাত্ররাজনীতি সুস্থ ধারায় ফিরবে, আসবে গুণগত পরিবর্তন, শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে-এসবই এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রত্যাশা।
ভোট দিতে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের শিক্ষার্থী নাসিম আহমেদ বলেন, আজ একটা ঈদের অনুভূতি পাচ্ছি। ঈদের দিন সকালে যেমন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গোসল করে সবাই নামাজ পড়তে যায়, ঠিক তেমনি আজ সবাই সকাল সকাল কেন্দ্রে চলে এসেছি। এই ধারা অব্যাহত থাকুক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থী মাহবুবুল আলম শামীম বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সাক্ষী হতে পেরে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছে। অনেক বড় ইভেন্ট। একটা উৎসবের আমেজ পাচ্ছি।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইসমাইল বলেন, অনেকদিন পর ডাকসু এলো। কে জিতবে, কে হারবে সেটা নিয়ে বেশ একটা উত্তেজনা করছে। সুষ্ঠু ভোট হোক এটাই চাওয়া।
শহিদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী রাশেদ বলেন, পরিবেশ অনেক সুন্দর। সকাল এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আশা করছি সুষ্ঠুৃ ও সুন্দরভাবে নির্বাচন শেষ করে আমরা একজন প্রতিনিধি পাব।
যেভাবে ভোট দেবেন শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে এবার প্রার্থী আগের তুলনায় বেশি। এ অবস্থায় একজন ভোটারকে সময় নিয়ে ভোট দিতে হবে। একটু ভুলের জন্য ভোট নষ্টও হতে পারে। এবার ডাকসুতে থাকছে পাঁচ পৃষ্ঠার ব্যালট। আর হল সংসদের থাকছে এক পৃষ্ঠার ব্যালট। ভোটাররা অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) শিটে নিজেদের প্রিয় প্রার্থীকে নির্বাচনের সুযোগ পাবেন।
ভোট দেয়ার বিষয়ে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস একটি সচেতনতামূলক ভিডিও চিত্র প্রচার করছে। এতে দেখানো হয়, ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হলে তার লাইব্রেরি কার্ড অথবা পে-ইন স্লিপ দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন। অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা হল আইডি কার্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি কার্ড দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন। পরিচয় নিশ্চিতের পর ভোটারের আঙুলে অমোচনীয় কালির দাগ দেবেন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা।
ভোটার তালিকায় নিজের নামের পাশে স্বাক্ষর করবেন ভোটার। এরপর পোলিং কর্মকর্তাকে ভোটার নম্বর জানাতে হবে। ব্যালট নিয়ে ভোটার প্রবেশ করবেন গোপন ভোট কক্ষে। ব্যালট পেপার থেকে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও ব্যালট নম্বর খুঁজে বের করবেন ভোটার।
ঘরের বাইরে দেয়া যাবে না দাগ
এরপর পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশের ঘরে স্পষ্টভাবে ক্রস চিহ্ন দেবেন ভোটার। খেয়াল রাখতে হবে, ক্রস চিহ্নটি যেন ঘরের বাইরে না যায়। পছন্দের প্রার্থীকে ভোটদান শেষে ব্যালট বাক্সে ব্যালট পেপার জমা দেবেন ভোটার।
কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের জন্য দুটি আলাদা ব্যালট বক্স থাকবে। ব্যালট পেপার ভাঁজ না করে সেগুলো নির্ধারিত বাক্সে ফেচভ ভোটদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।