জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেছেন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সমাজবিজ্ঞান ভবন কমিটির নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিনিধি ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
পদত্যাগপত্রে ড.রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা লিখেন, ‘আমি জাকসু নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য। এই কাজ চলাকালীন সময়ে আমি আকস্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি, ফলে কমিশন কার্যালয় থেকে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হই। তাই বিগত বেশ কিছুদিনের নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যেমন—ব্যালট পেপার, বাজেট চূড়ান্তকরণ ও অমর্ত্য রায়ের ভিপি পদ প্রার্থিতা বাতিলসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি ওয়াকিবহাল না। এমনকি এসংক্রান্ত কোনো প্রকার তথ্য আমাকে জানানো হয়নি এবং এত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমাকে অবগত না করে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনিকভাবে একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
তিনি লিখেন, ‘তথাপি দায়িত্ব ও কর্তব্যের সূত্র ধরে শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও নির্বাচনের ভোট গণনা পরবর্তী সময়ে আমি উপস্থিত হই এবং অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে আমি একজন নির্বাচন কমিশন সদস্য হিসেবে যথাসাধ্য আমার কর্তব্য পালনের চেষ্টা করি।’
তিনি আরও লিখেন , ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে একটি ভীষণ রকমের দুর্বল প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, অতিমাত্রার রাজনৈতিক সমীকরণ, এমনকি একজন শিক্ষকের অকাল প্রয়াণ, যিনি কোনোভাবে ভোট গণনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগই পাননি, তাকেও নির্বাচনের ভোট গণনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার মিথ্যা অভিযোগ এবং অদৃশ্য চাপ আমাকে এই কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করতে নৈতিকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।’
ড.রেজওয়ানা করিম অভিযোগ করে লিখেন, ‘৩৩ বছরের আকাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি, জাকসু শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব গঠন অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার্থে তৎপর না হয়ে কেবল রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য যখন ব্যবহৃত হয়, একজন নিরপেক্ষ শিক্ষক হিসেবে উক্ত কমিশনে সদস্য পদে বহাল থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অতএব আপনার নিকট আবেদন এই যে, আমাকে নির্বাচন কমিশন সদস্য পদ হতে অব্যাহতি দিয়ে বাধিত করবেন।’
এর আগে, শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। তিনি ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি।
মাফরুহী সাত্তার বলেন, ‘নির্বাচনে আমি অনেক অনিয়ম দেখেছি। অনেক মারাত্মক ত্রুটি দেখেছি। এই ত্রুটিগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আমি নির্বাচন কমিশনের সকলে একমত পোষণ করলেও বিশেষ কিছু কারণে আমার যে মতামত তা গ্রহণে তারা অপারগতা প্রকাশ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমার মতামতের সুরাহা না করেই ভোট গণনা শুরু করেছে, তখন আমি আমার যে মত তা লিখিতভাবে জানিয়েছি। লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড বলতে আমরা যা বুঝি নির্বাচনে সেটি ছিল না। আমি যাতে পদত্যাগ না করি সে জন্য গতকাল থেকেই আমার ওপর চাপ ছিল, তবুও আমি পদত্যাগ করছি।’
এ ছাড়াও নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও প্রশাসনের পক্ষপাতের অভিযোগ উঠায় নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইনও।
তিনি বলেন, ‘জাকসু নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। প্রচুর কারচুপির অভিযোগ উঠেছে প্রায় সব মহলেই। এ নির্বাচন স্থগিত করা উচিত।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন