জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে কার্যত নিষিদ্ধ থাকার পর তাদের এই জয়কে বিশ্লেষকেরা যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে দেখছেন।
দীর্ঘ তিন দশক পর অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে ২০টিতেই জয়ী হয়েছে শিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’। বাকিগুলোর মধ্যে ২টিতে জয়ী স্বতন্ত্র এবং ৩টিতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। ভিপি হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু এবং জিএস নির্বাচিত হয়েছেন মাজহারুল ইসলাম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, যার ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস সমৃদ্ধ। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ থেকে সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৯২ সালে ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান কবির হত্যার পর থেকে ছাত্রশিবির কার্যত ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের দমননীতিতে তাদের কার্যক্রম আরও সীমিত হলেও তারা গোপনে ছাত্রলীগের ছায়ায় সক্রিয় ছিল এবং বাইরে থেকে নিরপেক্ষ শিক্ষার্থীদের সহানুভূতিও আদায় করেছে। বিএনপির আমলেও তাদের একটি অংশ বিএনপির সঙ্গে মিশে যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, শিবিরের জয় কাকতালীয় নয়; এটি দীর্ঘ পরিকল্পনা ও সংগঠিত নেটওয়ার্কের ফল। তারা পাঁচটি মূল কারণ উল্লেখ করেছেন—
কৌশলী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা
নব্বইয়ের দশক থেকে গোপনে নেটওয়ার্ক বজায় রেখে ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করেছে শিবির। ছাত্রলীগের আধিপত্যকালেও গোপনে রাজনীতি ধরে রেখেছে।
গণরুম সংস্কৃতির বিরোধিতা
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমে রাখা ও জোর করে মিছিলে নেওয়ার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করেছে।
ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের বিকল্প হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন
শিবির দাবি করেছে, ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে পার্থক্য নেই—চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জোর করে মিছিলে নেওয়া—সবই তাদের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে।
ছাত্রীসংস্থার সক্রিয় ভূমিকা
নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কার্যক্রম জোরদার করে আস্থা তৈরি করেছে শিবির। নারী প্রার্থীকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার আশ্বাস দিয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শিবির। হল-সংস্কার, অনুষ্ঠান আয়োজন, সহায়তা কর্মসূচি—সবই শিক্ষার্থীদের ভোটকে তাদের দিকে টেনেছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই ফল ভবিষ্যতের জাতীয় ছাত্ররাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে।