রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) জিএস সালাউদ্দিন আম্মারের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুরে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় রাজশাহী মহানগর এনসিপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সভা করছিলেন রেজিস্ট্রার। পরে সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীরা সভা করছেন অভিযোগ তুলে কার্যালয়ে আম্মার প্রবেশ করলে তারা বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এ বিষয়ক একটি ভিডিও রোববার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত প্রায় ২০ ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের বিভাগের সভাপতি অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন।
রোববার দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব ওই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এনামুল হককে অব্যাহতির চিঠিতে সই করেন। চিঠিটি রেজিস্ট্রার অফিস থেকে গতকালই ওই বিভাগে পাঠানোর কথা ছিলো।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলাফল না পাওয়ায় তারা রাকসু নেতাদের কাছে যান। রাকসু জিএস বিষয়টি নিয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে আম্মারকে বলা হয় রেজিস্ট্রার ‘মহানগর বিএনপির’ নেতাদের সঙ্গে সভা করছেন। পরে সভা কক্ষে ‘জোর’ করে কক্ষে প্রবেশ করেন আম্মার। পরে রেজিস্ট্রার এবং আম্মারের মধ্যে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
ঘটনার বিষয়ে জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগ ২৩ দিন ধরে আন্দোলন করতেছে। গত বৃহস্পতিবার উপাচার্য স্বাক্ষর করে ওই ফাইল রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু তারা আজও সেই ফাইল পায়নি। তারা বারবার আমার কাছে আসতেছে, বলছে ভাই আমাদের কাগজ কেন এখনও হচ্ছে না? পরে আমি রেজিস্ট্রারকে কল দিলাম উনি কল ধরলেন না। তারপর আমি উনার দপ্তরে যাওয়ার পরে উনার পিএসকে বলার পর ভিতরে আমার কথা বলার জন্য যায়। পরে উনি বাইরে এসে বলতেছে যে ভাই আপনাকে একটু পরে আসতে বলছে মহানগর বিএনপির সাথে একটা মিটিং করতেছে।’
তিনি বলেন, ‘তারপর আমি উপাচার্যের সাথে দেখা করতে যায়। কিন্তু উপাচার্য ছিলেন না। আমি সেখানে দ্বিতীয়বার গেলে তখনও বলে বিএনপির প্রোগ্রাম চলতেছে। তারপর আমি ভেতরে ঢুকে যায়। গিয়ে বললাম এই চিঠিটা কখন ইস্যু হচ্ছে? তখন উনি বলল আজকে। তারপর বাগবিতন্ডা শুরু হলো। উনি মেয়েদের হলের আন্দোলনেও গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। তিনি প্রায় সব জায়গাতেই গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন। তাকে তো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন কুত্তার মতো আচরণ করার জন্য দায়িত্বে বসানো হয়নি!’
সালাহউদ্দিন আম্মার আরও বলেন, ‘আজ এক পর্যায়ে তিনি আমার দিকেও তেড়ে আসেন। যিনি ভিডিও করছিল তার দিকেও তেড়ে এসে ফোনটা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ভিডিওতেও স্পষ্ট দেখা যায়, তিনি আমাকে বারবার ‘গেট আউট’ বলে চিৎকার করছেন এবং বলছেন, ‘এটা আমার কক্ষ, তুমি এখানে কেন?’ আমি যদি কোনো অপ্রয়োজনীয় কাজে সেখানে যেতাম, তাহলে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতাম না। আমাকে জানানো হয়েছিল, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করছেন। তাই দায়িত্বের জায়গা থেকে আমি বিষয়টি যাচাই করতে গিয়েছিলাম। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য রাকসুতে নির্বাচিত হইনি; আমি নির্বাচিত হয়েছি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার জন্য।’
অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসুদ বলেন, ‘চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি নিয়োগ বিষয়ে গতকাল (শনিবার) একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটা কার্যকর করা নিয়ে আমি আজকে (রোববার) সকাল থেকেই কাজ করছিলাম। এর মধ্যে ১ সপ্তাহ আগে এনসিপি'র রাজশাহী মহানগরের নতুন কমিটির নেতারা আমার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার জন্য অ্যাপয়নমেন্ট নিয়েছিলেন। ওনারা সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন আজ। ওনাদের সাথে সাক্ষাৎ করার সময় বাইরে দুইজন ডীন অপেক্ষা করছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারও দেখা করার জন্য গিয়েছিল। তাকেও কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সে অপেক্ষা না করে বেয়াদবি করে হঠাৎ আমার চেম্বারে ঢুকে পড়ে।
তার দাবি, আমি নাকি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি নিয়োগের চিঠি আটকে রেখেছি। অথচ সকাল থেকেই আমরা বিষয়টির সুরাহা করার জন্য কাজ করছিলাম। ওই সময়ও নতুন সভাপতির নিয়োগ অনুমোদন হওয়ার পরের কাজ করছিলো অন্যরা।’
রেজিস্ট্রার আরও বলেন, ‘এই অবস্থায় সে হঠাৎ চেম্বারে ঢুকে পড়ে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি নিয়োগ হবে। এখানে তাঁর কাজ কী? রাকসুর ভিপি সৌজন্য সাক্ষাৎ করার জন্য ১ সপ্তাহ আগে আমাকে মেসেজ দিয়েছে। আমি এখনো বেচারাকে রিপ্লাই দিতে পারিনি। আর এই ছেলে সব জায়গায় গিয়ে মাতব্বরি করে। একটা বেহায়া ছেলে। ভিডিওতেই এর প্রমাণ রয়েছে। আমি তাকে গেট আউট বলে বের করে দিয়েছি। সে কেনো একটা অফিস অর্ডার নিয়ে কথা বলতে যাবে? এটাতো আমি বরদাশত করবো না। ছাত্র রিলেটেড কোনো বিষয় হলে সে যেতে পারে।’
এই ঘটনায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক মোবাশ্বের রাজ।
সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সালাউদ্দিন আম্মার ও রেজিস্ট্রার স্যারের সঙ্গে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার সময় সেখানে বিএনপির কেউ ছিল না। আমার উপস্থিতিতে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতৃত্ব ছিল। আমরা সেখানে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রেজিস্ট্রার স্যারের পিএস সম্ভবত আমাদেরকে বিএনপির নেতাকর্মী ভেবে তাদেরকে ইনফর্ম করে। এখান থেকেই ভুল বোঝাবুঝির সূচনা হয়।’
এনসিপি নেতাদের রেজিস্ট্রারের মিটিংকে বিএনপিকে জড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী।
তিনি বলেন, ‘রেজিস্ট্রার অফিসে আম্মার ও শিক্ষক পরস্পরকে ধমকাচ্ছেন, বিএনপির নাম টেনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, অথচ সেখানে বিএনপির কেউই ছিল না। এনসিপির সঙ্গে নিয়মিত দেখা যায় আম্মারকে, অথচ আজ তিনি তাদের চিনলেন না। গণতান্ত্রিক সমাজে যে কেউ আলোচনা করতেই পারে, এতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে বিএনপির নাম ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো অনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

-20251110132804.webp)
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন