সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের হামলার মদদদাতা বহিষ্কৃত জাবি অধ্যাপক।
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে সিজিএসের ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫’ পাঁচ তারকা হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি এবং জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার মদদ দেওয়ার অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত অধ্যাপক বশির আহমেদ আজ রাজধানীতে সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যাচেষ্টা মামলায় অভিযুক্ত সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন বশির আহমেদ। তিনি জাবির আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’-এর সদস্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে ১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় ‘ক্রীড়নক’-এর ভূমিকা পালনকারী এই অধ্যাপকের অভিযুক্ততার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে। এ ছাড়া বর্তমান প্রশাসন কর্তৃক অধিকতর তদন্ত কমিটির (স্ট্রাকচারাল কমিটি) কাজ চলমান রয়েছে।
এদিকে, ঢাকার আশুলিয়া থানায় দায়ের করা একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি অধ্যাপক বশির। চলমান বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্যেই তার সিজিএসের অনুষ্ঠানে উপস্থিতি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনদের মধ্যে নেতিবাচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে যারা শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় মদদ দিয়েছে, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে হামলায় অংশ নিয়েছিল তাদের এমন অবাধ বিচরণ আমাদের বিচলিত করে। একাধিক মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন পদক্ষেপ আমরা দেখিনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এখনও তাদের অর্ধেক বেতন ভোগ করাচ্ছেন বসিয়ে রেখে। আমরা চাই, দ্রুত তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক, শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’
জুলাই অভ্যুত্থানে গুরুতরভাবে আহত জাবির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. খো. লুৎফুল এলাহী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত, শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস আক্রমণের মদদদাতা এবং লেলিয়ে দেওয়া পুলিশের গুলিতে মারাত্মক আহত ও চোখদৃষ্টিহীন হওয়ার পরও শিক্ষক ও সহকর্মী হিসেবে বশির আহমেদ ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের কাছে অন্যায়ে প্রতিবাদকারীদের জামাতী বলে প্রচার করেছিল। তার এ ধরনের প্রচারণার মধ্য দিয়ে তিনি ‘জামাতীদের’ গুলি করা জায়েজ হিসেবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন।’
‘এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও এ ধরনের আয়োজনে একজন আসামি ও জুলাই বিপ্লববিরোধীকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ায় আয়োজকদের প্রতি নিন্দা ও ঘৃণা প্রদর্শন করছি।’
বহিষ্কৃত অধ্যাপক বশির আহমেদের অনুষ্ঠানে উপস্থিতির ব্যাপারে জানতে সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর সভাপতি জিল্লুর রহমানকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সিজিএসের সভাপতি জিল্লুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, চতুর্থবারের মতো আয়োজিত এ সম্মেলনে ৮৫টি দেশের ২০০ বক্তা, ৩০০ প্রতিনিধি (চিন্তাবিদ, রাজনীতিক, কূটনীতিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব) ও এক হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী যোগ দেবেন। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ভাঙন ও পুনর্গঠন: পরিবর্তনশীল বিশ্বে ক্ষমতা ও বিশৃঙ্খলতার মধ্যে পথনির্দেশ’। ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত এ সম্মেলন চলবে।


