ভাইভা বোর্ডে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েও শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ হতে পারেননি নোয়াখালীর ইসলামি কামিল মাদ্রাসার মেধাবী শিক্ষার্থী জাকির হোসেন। এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষায় সাফল্যের পর ভাইভাতেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের পর হতাশ হয়ে পড়েছেন এই তরুণ।
জাকির হোসেন জানান, ‘ভাইভায় আমাকে ১২টি আরবি ব্যাকরণভিত্তিক প্রশ্ন করা হয়। প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছি। বোর্ডের পরীক্ষকেরাও তখন সন্তুষ্ট ছিলেন বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু ফলাফলে ফেল দেখানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে মাত্র ১০ জনকে পাস করানো হয়েছে, যেখানে আগের বছর প্রায় ৯৫ শতাংশ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিল। এ বছর হঠাৎ এত কম পাস কেন?’
এনটিআরসিএ ১৮তম নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে গত ৪ জুন। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কোনো কোনো ভাইভা বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে মাত্র ১-৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন, আবার অন্য বোর্ডে পাসের হার ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত। এই বৈষম্য প্রশ্ন তুলেছে পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে।
এক ভাইভা বোর্ডের পরীক্ষক ও লালবাগ মাহমুদা খাতুন মহিলা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি বদিউল আলম সরকার বলেন, ‘যেসব প্রার্থী আরবি বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান দেখাতে পারেননি, তাঁদের ফেল করানো হয়েছে।’ তবে একই বিষয়ের অন্য বোর্ডের কয়েকজন পরীক্ষক মত দিয়েছেন, ‘৩০ জনের মধ্যে ২৮-২৯ জন ফেল করানো সাধারণ বিষয় নয়। এ ধরনের ফল অবশ্যই পুনর্মূল্যায়নের দাবি রাখে।’
চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর অসন্তোষে ফেটে পড়েছেন বহু ভুক্তভোগী। চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য প্রার্থী এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের একটাই দাবি-ভাইভা পরীক্ষার ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন ও যোগ্যদের সনদ প্রদান।
সোমবার এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনরতদের পক্ষ থেকে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ‘যমুনা’ ভবনে ডাকা হয়। প্রধান উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব শাব্বীর আহমদ তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করে আশ্বাস দেন যে বিষয়টি এনটিআরসিএ’র সঙ্গে সমন্বয় করে সমাধানের চেষ্টা চলবে।
এদিকে এনটিআরসিএ’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। এছাড়া বঞ্চিত প্রার্থীদের প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে গিয়ে শিক্ষা সচিবের সঙ্গেও দেখা করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা আন্দোলনকারী মাহমুদা বেগম জানান, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে এমএসসি করেছি। ভাইভায় আটটি প্রশ্নের সবগুলোর উত্তর দেওয়ার পরও ফেল দেখানো হয়েছে। এটা চরম অবিচার।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বোর্ডে ৪ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী থাকলেও ভাইভায় পাস করেছেন মাত্র ৫০৪ জন। অথচ কোটা ছিল তার চেয়েও বেশি। তাহলে বাকিরা গেল কোথায়?’
চাঁদপুরের প্রিয়াঙ্কা, ঢাকার সোহেল হোসেনসহ অনেকে অভিযোগ করেন, ভাইভা বোর্ডে মতাদর্শগত পক্ষপাত ও অস্বচ্ছ মূল্যায়নের শিকার হয়েছেন তাঁরা।
জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম, রাস্তায় নামতে নয়। এখন ন্যায়বিচার ও স্বীকৃতির আশাতেই রাজপথে নামতে হয়েছে।’
বর্তমানে শত শত ভুক্তভোগী তরুণ-তরুণী ন্যায্য দাবি আদায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :