রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) তিন শিক্ষার্থীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। প্রাথমিকভাবে পাঁচজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন- জনি, হাসান, আকাশ, হৃদয় ও সাকিব। পুলিশ জানিয়েছে, জনি ও সাকিব জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আকাশ ও হৃদয় এক সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন, পরে তারা যুবদল ও জামায়াত-শিবিরপন্থী একটি স্থায়ী গ্রুপে মিশে যান।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে; যাদের নাম এসেছে তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সাকিব ও জনি জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট। ফারাবীও একসময় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তদন্ত এগোলে বিস্তারিত জানানো যাবে।’
রাজশাহী মহানগর শিবিরের একজন নেতা নিশ্চিত করেছেন, জনি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তবে নগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুস সামাদ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ১১টার দিকে কাজলা গেটের সামনে একটি হোটেলে তিন শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালানো হয়। মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা দুই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে, আরেকজনকে ছুরিকাঘাত করে আহত করে।

আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- ফিন্যান্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আল ফারাবী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের তাহমিদ আহমেদ (বখশী) ও নাট্যকলা বিভাগের মিনহাজ।
আহত আল ফারাবী পূর্বে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মাদার বখশ হল শাখার নেতা ছিলেন। তিনি ১৫ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় পদত্যাগ করেছেন। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজনকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাত ১১টায় ফারাবীসহ শিক্ষার্থীরা কাজলা ক্যান্টিনে খাবার খাচ্ছিলেন। ১০-১৫টি মোটরসাইকেলে আসা মুখোশধারী ও হেলমেটধারী দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে। তারা হাতে হাতুড়ি, লোহার রড, রামদা ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। ফারাবী ও বখশী কয়েকজনের সঙ্গে লড়াই করলেও বখশীকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ফারাবীও ধাওয়া করে বের করে এনে বেতার মাঠে মারধর করা হয়।
উদ্ধারের পর ফারাবীর পিঠে ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। ফারাবী ও মিনহাজ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অন্য আহত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন।
আল ফারাবী বলেন, “আমি জানি না কে বা কেন এটি করেছে। কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই। সুস্থ হয়ে মামলা করব।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “আমরা পাশের টেবিলে বসেছিলাম। হামলা আমাদের সামনেই হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়ায় আমরা কিছু অভিযুক্তকে শনাক্ত করেছি।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, হামলার সময় রাকসুর সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সালমান সাব্বির ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং মোবাইলে ধারণ করছিলেন। তবে তিনি ফেসবুকে জানান, কাকতালীয়ভাবে ঘটনাস্থলে ছিলেন এবং বাইক ঠিক করতে গিয়েছিলেন।
গত ৩০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট গোলাম আজম ফয়সালকে মারধর করার অভিযোগ, এছাড়া নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রভাব বিস্তার ইত্যাদি নিয়ে জনির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
হামলার পর তিন দফা দাবিতে ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় কাজলা গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুপুর আড়াইটার সময় পর্যন্ত অবরোধ চলছিল। শিক্ষার্থীরা ‘সন্ত্রাসীর আস্তানা ভেঙে দাও’, ‘প্রশাসন কী করে, আমার ভাই মেডিকেলে’, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন