বুধবার, ০৭ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রুহুল আমিন ভূঁইয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম

‘জেন-জি’র বিজয়

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম

‘জেন-জি’র বিজয়

মিম, সিয়াম ও জিম। ছবি: সংগৃহীত

নব্বুইয়ের দশকের শেষ তিন বছর এবং দুই হাজার সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত যাদের জন্ম, তাদের বলা হচ্ছে ‘জেনারেশন জেড’ বা সংক্ষেপে ‘জেন-জি’। এর সঙ্গে আই-জেনারেশন, জেন টেক, নেট জেন, বুমার্স সহ আরও নানারকম নাম রয়েছে, যার বড় কারণ হলো ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা। মূলত এই প্রজন্ম হলো প্রকৃত ডিজিটাল প্রজন্ম। এর আগের প্রজন্ম ইন্টারনেটের উত্থান দেখলেও তারা ডিশ ক্যাবল সংযুক্ত টেলিভিশন দেখেছে, ল্যান্ডফোনও ব্যবহার করেছে।

কিন্তু জেন-জি গোত্রের অধিকাংশই বড় হয়েছে এক ধরনের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সময়ের মধ্য দিয়ে। যার ফলে তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল এ প্রজন্ম প্রযুক্তিতে আসক্ত। কিন্তু সবার সেই ধারণা বদলে দিয়ে এ প্রজন্ম দেখিয়েছে নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা। এ যেন এক অন্যরকম বাংলাদেশ। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন শোবিজের অনেকেই। তাদের মধ্যে অন্যতম তরুণ অভিনয়শিল্পী রাফাহ নানজিবা তোরসা, সিয়াম মৃধা, আরোহী মিম ও মাফতুহা জান্নাত জিম।

শিক্ষার্থীরা সফল: আরোহী মিম
সদ্য পদত্যাগ করা সরকারকে বিরোধী দল বিএনপি অনেক বছর ধরে চেষ্টা করেও নামাতে সফল হয়নি। কিন্তু সেটা শিক্ষার্থীরা করে দেখিয়েছে। আমরা একটা যুদ্ধে জয়ী হয়েছি, এটা আমাদের জন্য গর্বের। যদি কোন ভাবে এই সরকার মোড় ঘুরে বসে থাকতে পারত তাহলে আমরা যারা প্রতিবাদ করেছি তাদের নির্ঘুম পালিয়ে থাকতে হত। অনেক ভাবে হয়রানি হতাম। এর চেয়ে আরও বেশি অত্যাচার করতে পারত। এই জয় নিয়ে আমরা অনেক বেশি আনন্দিত। আগামীতে এ রকম স্বৈরাচার জন্ম নিতে দেব না। ছাত্র সমাজের মতো করে এ দেশ চলবে। এখন আমাদের চাওয়া দুর্নীতি মুক্ত একটি বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ থাকবে বাকস্বাধীনতা। সবাই মন খুলে হাসতে পারবে এবং বলতে পারবে আমার দেশ। আগে মানুষ বলত বাংলা ছাড়ব কিন্তু এখন আমরা বলি বাংলা গড়ব। আমরা সবাই মিলে নতুন একটি বাংলাদেশ তৈরি করব।

কোনভাবনা থেকে অংশ নেওয়া জানতে চাইলে আরোহী মিম বলেন, বুকে সাহস নিয়ে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কারণ, আমিও একজন শিক্ষার্থী। তারপর অভিনয় শিল্পী। এত বছর অনেক অন্যায় হয়েছে। আন্দোলনে যে ভাবে আমাদের মারা হচ্ছিল এসব দেখে যাদের মধ্যে বিবেকবোধ আছে তারা বসে থাকতে পারবে না। আমিও পারিনি। এমন একটি স্বাধীন দেশের অপেক্ষায় ছিলাম। শেখ হাসিনার নির্দেশে সব হত্যা হয়েছে। আমি সরকার পতনের ভাবনা নিয়েই রাজপথে অংশ নেই। স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে এ যুদ্ধ করা। আমাকে দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। এটা একজন শিল্পী হিসেবে অবশ্যই ভালো লাগার।

৭৫ ভাগ জয় হবে নামার আগে বুঝতে পেরেছিলাম। সবসময় সত্যের জয় হয়েছে। জয়ী হতেই হবে সেই ভাবনা থেকে নেমেছি। প্রশাসন না থাকার কারণে কিছু টোকাই সুযোগে ডাকাতি করছে। অচিরেই সবকিছু স্বাভাকি হয়ে যাবে। আজ বাংলাদেশ মুক্ত ও স্বাধীন। আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ারা বদলে যাবে বলে আশা রাখি। নতুন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার অসম্ভব মেধাবী একজন মানুষ। তিনি আমাদের দেশের গর্ব। আমরা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই। দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেবে বলে প্রত্যাশা করি।

তরুণদের এগিয়ে নিতে হবে: তোরসা
স্বাধীনতা পাওয়ার চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। তাই বলব একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক উন্নয়নটা জরুরি। কোনো দেশ যদি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পরে তাহলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। দেশ এখন পিছিয়ে। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে প্রত্যাশা থাকবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন যাতে সফল ভাবে হয়। সেই সঙ্গে তরুণদের আরও এগিয়ে নিতে হবে। শিল্প ও সাহিত্যে মেধাবীদের সুযোগ দিতে হবে। সবকিছুতে যাতে স্বাধীনতা থাকে। বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক একটি দেশ চাই। আমি ১০ বছর ধরে শোবিজে জড়িত। বিভিন্ন সময়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি।

প্রথম যখন ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলন হয় তখনই প্রথমসারিতে অংশ নেই। যার কারণে অনেক হুমকি পেয়েছিলাম। এবারের আন্দোলনে আমার পরিচিতি অনেকই মারা গেছেন। যা আমার জন্য অনেক বেদনার। সেই জায়গা থেকে প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হয়েছি। স্বাধীন দেশে এমন অন্যায় মেনে নেওয়া সম্ভব না। সবসময় সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলেছি। সামনেও বলব। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার শুরুতেই ভেবেছিলাম এবার কিছু একটা হবে। কারণ, গোটা দেশের শিক্ষার্থীরা নেমেছে তাদের অধিকারের জন্য। মানুষকে বেশি ভয় দেখাতে নেই; যাতে সে ভয় ভুলে যায়। সাধারণ মানুষকে এতটা ভয়ে রেখেছিল যার কারণে মানুষ ভয় পেতেই ভুলে গেছে। তারই প্রমাণ দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সবশেষে বলব সবাই এক হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

আর স্বৈরাচারী শাসক চাই না: সিয়াম
আজ দেশ স্বাধীন। আমরা অশান্তি চাই না। কোনো রক্ত চাই না। আর স্বৈরাচারী শাসক চাই না। কোটা নিয়ে যেহেতু আন্দোলনের শুরু তাই বলব সকল ক্ষেত্রে মেধাবীরা সুযোগ যেন বেশি পায়। এই দেশে আর কোনো দুর্নীতি চাই না। মেধাবীরা যেন ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার মূল কারণ আমিও একজন ছাত্র। তবে প্রথমে নামতে আগ্রহী ছিলাম না। তবে এত পরিমাণ অত্যাচার করেছে এবং তাজা অনেকগুলো রক্ত জড়িয়েছে তা দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। একজন সুস্থ মানুষ এসব দেখে ঘরে বসে থাকতে পারবে না। ছাত্র হিসেবে তাদের সঙ্গে অংশ নেওয়া কর্তব্য ছিল। বিবেকের তাড়নায় ছুটে যাই। কখনো ভাবিনি দেশে এমনটা ঘটবে। সাধারণ জনগণ তিনবার ভোট দিতে পারেনি। আমি ভোটার কিন্তু কখনো ভোট দিতে পারিনি। ভোট দেওয়ার আগেই ভোট হয়ে যায়। কখনো ভাবিনি শেখ হাসিনা নামবে। কিন্তু ছাত্রদের এতটাই শক্তি যে, পুরো দেশকে বুঝিয়ে দিয়েছে কতটা শক্তিশালী। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এতটাই একতা ছিল যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী নামিয়ে দিয়েছে। যদিও এসব শুরুতে ভাবনার বাহিরে ছিল। যেটা হয়েছে দেশের জন্য মঙ্গল হয়েছে। এমন প্রধানমন্ত্রী কখনো চাইনি এবং এখনো চাই না।

সহিংসতা মুক্ত দেশ চাই: জিম
অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কাছে মডেল-অভিনেত্রী মাফতুহা জান্নাত জিম’র প্রত্যাশা ধর্মীয় সহিংসতা মুক্ত একটা দেশের। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক ভাবে দেশ এগিয়ে নিতে হবে। দেশ যেন শান্তি ও সম্প্রীতির পুণ্যভূমি হয়ে বিশ্বের মাঝে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। নতুন ভোরে দুর্নীতি, সহিংসতা, হানাহানি আর দেখতে চাই না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকবে লেখাপড়ার সুষ্ঠ পরিবেশ। ক্যাম্পাস থাকবে রাজনীতি মুক্ত। আমি সব সময়ই সহিংসতা ও রক্তপাতের বিপক্ষের শান্তি প্রিয় একটা মানুষ। যখন আমার ভাই, বোন, বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীর যৌক্তিক দাবির জন্য মার খেতে দেখেছি। তাদের বুকে অন্যায়ভাবে গুলি চালানো দেখেছি, তখন আর নিজেকে ঘরে আটকে রাখতে পারি নাই। আমার বিশ্বাস ছিল বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের জয় হবেই। কিন্তু এত দ্রুত বিজয় আসবে তা ভাবিনি। আজ মুক্ত বাংলাদেশে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!