দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার বাংলা সিনেমা যেন এক অদৃশ্য মন্দার মধ্যে আটকে ছিল। বাণিজ্যিক ঘরানার ছবিগুলো বলিউড - হলিউডের ঝলমলে প্রোডাকশন ভ্যালু আর স্টারপাওয়ারের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছিল না, আর শিল্পধারার ছবিগুলো থেকে যেত নগরকেন্দ্রিক সিঙ্গেল স্ক্রিন আর অল্প কিছু ‘এলিট’ দর্শকের গণ্ডিতে। ফলে মূলধারার দর্শকের বাংলা সিনেমা দেখতে হলমুখো হওয়ার প্রবণতা কমে গিয়েছিল, হাইপ তৈরি করতেও ব্যর্থ হচ্ছিল টালিউড।

কিন্তু কৌশিক গাঙ্গুলীর ‘ধূমকেতু’ সেই চিত্রে এক বিরল ব্যতিক্রম তৈরি করেছে। প্রায় দশ বছর ধরে আটকে থাকা এই ছবি অবশেষে মুক্তি পেতে না পেতেই কলকাতায় তুমুল সাড়া ফেলেছে। দেব - শুভশ্রীর বহু প্রতীক্ষিত পুনর্মিলন যেন দর্শকের মনে ফিরিয়ে এনেছে ২০১০ - এর দশকের শুরুর সেই উত্তেজনা - যখন স্টারপাওয়ার, মিউজিক, প্রচারণা আর ‘স্টোরি - টেলিং’ মিলে সিনেমা ছিল শহরের আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু।
মুক্তির আগেই ‘ধূমকেতু’ রেকর্ড গড়েছে। রাত ২টা এবং সকাল ৭টার শো - যা অনেক দিন টালিউডে দেখা যায়নি - হাউসফুল গেছে প্রথম দিনেই। টিকিটের চাহিদা সামাল দিতে বাড়াতে হয়েছে শো সংখ্যা। এর আগে পশ্চিমবঙ্গে এমন ভোরবেলার শো সাধারণত হতো কেবল বলিউড বা হলিউড ব্লকবাস্টারের ক্ষেত্রে।

এই উন্মাদনা শুধু দেব - শুভশ্রীর ব্যক্তিগত রসায়ন বা ছবির দীর্ঘ প্রতীক্ষা থেকে আসেনি - এটি এসেছে দর্শকের ‘স্থানীয় তারকাদের নিয়ে বড় গল্প’ দেখার তৃষ্ণা থেকে। গত কয়েক বছরে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ও বাইরের ভাষার কনটেন্টে অভ্যস্ত দর্শক আবারও হলমুখী হচ্ছেন, যদি গল্প ও প্রেজেন্টেশন তাদের আবেগে নাড়া দিতে পারে।
‘ধূমকেতু’র প্রচারণা কৌশলও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ট্রেলার লঞ্চে দেব - শুভশ্রীর একসঙ্গে হাজির হওয়া, নিজেদের পুরোনো অভিমান পেরিয়ে মঞ্চে নাচ - আড্ডা - এসবই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় তুলেছে। মুক্তির আগের রাতে দেবের স্পয়লার পোস্ট না করার অনুরোধও যেন ভক্তদের মধ্যে ‘অংশগ্রহণের দায়বদ্ধতা’ তৈরি করেছে।

এই সাড়া টালিউডের জন্য এক ইতিবাচক সংকেত। কারণ, বাঙালি দর্শক এখনও হলে যেতে প্রস্তুত, যদি কনটেন্টে ‘ইভেন্ট ফিল’ থাকে। এক দশকেরও বেশি সময় পর এমন হাইপ ইঙ্গিত দিচ্ছে - দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি বা বলিউডের মতোই টালিউডও চাইলে বড় বাজেট ও সুপরিকল্পিত প্রচারণায় ‘ইভেন্ট সিনেমা’ ফিরিয়ে আনতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই সাফল্য কি ধারাবাহিক হতে পারবে? যদি ‘ধূমকেতু’ বক্স অফিসে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারে, তবে এটি প্রযোজক - পরিচালকদের জন্য এক বড় বার্তা হবে - বড় স্বপ্ন দেখা এখনও সম্ভব, যদি কনটেন্টে স্থানীয় স্বাদ আর তারকাখ্যাতি মিশে যায় সঠিকভাবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন