বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর বাড্ডায় পুলিশি গুলিতে নিহত হন পারভেজ (২৩)। এখনো তার লাশ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন পারভেজের বাবা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সবুজ ব্যাপারী বলেন, ‘প্রতিবার ঈদ এলে আমার ছেলেটা ঢাকা থেকে বাড়ি আসত। সবার জন্য কাপড়-চোপড় আনত। মায়ের হাতের সেমাই আর খিচুড়ি খেতে খুব পছন্দ করত। কিন্তু আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা গেল সে। এখনো ওর লাশটা পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘শুনেছি, বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন হয়েছে। ওর মৃত্যুর পর আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলে নেই, এখন আমাদের ঈদ-চানও নাই।’
পারভেজ চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার পূর্ব ফতেপুর ইউনিয়নের বারহাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ঢাকায় একটি আসবাবপত্র তৈরির দোকানে মিস্ত্রির কাজ করতেন এবং সেখানেই একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে পারভেজ ছিলেন বড়। পারভেজের বাবা সবুজ ব্যাপারী একসময় লঞ্চে শ্রমিকের কাজ করতেন, এখন গ্রামের একটি ছোট্ট চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। পারভেজের আয়েই সংসার চলত, চলত ছোট দুই বোনের পড়ালেখাও।
ঘটনার দিন দুপুরে পারভেজের এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা খবর পান যে পারভেজ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহ খুঁজতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তবে আজও তাঁরা তাঁর কবরটি খুঁজে পাননি।
সবুজ ব্যাপারীর কণ্ঠে ছিল শুধু আক্ষেপ—‘ছেলের লাশটাও দেখতে পারলাম না। ও তো পরিবারের ভরসা ছিল। এখন সব শেষ।’
পারভেজের ছোট বোন কলেজপড়ুয়া ঝুমুর আক্তার বলেন, ‘ভাই ছাড়া ঈদ কল্পনাও করতে পারি না। আগে ঈদের সব আনন্দ ছিল ভাইকে ঘিরে। এখন ভাই নেই, আমাগো ঈদও নেই। সব ফিকে, সব মাটি।’
আপনার মতামত লিখুন :