২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সংস্কৃতি খাতে ৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়লেও ক্ষোভ দেখা গেছে সংস্কৃতি অঙ্গনে। দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় বাজেটের অন্তত এক শতাংশ সংস্কৃতিতে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়ে এলেও এবারের বাজেটে মোট বরাদ্দ ৮২৪ কোটির ঘরে থেমে গেছে, যা শিল্পীদের মতে ‘হতাশাজনক ও অবহেলার প্রমাণ’।
এ বছর সংস্কৃতি খাতের জন্য ৪৮৭ কোটি টাকা পরিচালন ব্যয় এবং ৩৩৭ কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে।
যদিও গত অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৭৭৯ কোটি টাকা, যা সংশোধন হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৭৪২ কোটিতে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার বাজেট উপস্থাপনকালে এই বরাদ্দ ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে থিয়েটার আর্টিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব ঢাকা (টাড) থেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলা হয়েছে, এই বাজেট সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে দেয়।

ছবি- সংগৃহীত
সংগঠনের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘একটি জাতির আত্মপরিচয়, ইতিহাস ও ভবিষ্যত গঠনে সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অথচ বারবার দেখা যাচ্ছে, এই খাতটি অবহেলিত হচ্ছে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘নাট্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, চিত্রশিল্পীসহ বিভিন্ন মাধ্যমের কর্মীরা বছরের পর বছর সীমিত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের জন্য টেকসই আর্থিক সহায়তা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও গবেষণাভিত্তিক সংস্কৃতিচর্চা জরুরি। বাজেটে এ দাবি উপেক্ষিত হওয়ায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’
সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বাড়ার পাশাপাশি ওটিটি প্লাটফর্মে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপও বেদনার জন্ম দিয়েছে নির্মাতাদের মধ্যে।
সামাজিক মাধ্যমে নির্মাতা আশফাক নিপুন লিখেছেন, ‘বিশ্বে যেখানে নতুন শিল্পকে কর রেয়াত দিয়ে সহায়তা করা হয়, সেখানে মাত্র পাঁচ বছর বয়সী আমাদের ওটিটি বলয়ের ওপর এই শুল্ক নির্মাতাদের গল্প বলা ও বাজেট পরিচালনায় চাপ সৃষ্টি করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই শুল্কের ফলে বৈধ সাবস্ক্রিপশন কমবে, পাইরেসির প্রভাব বাড়বে এবং শেষমেশ শিল্পই সংকুচিত হবে।’
নিপুনের পোস্ট শেয়ার করে নির্মাতা আদনান আল রাজীব ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘সরকারের উচিত সংস্কৃতি খাতকে আরও সমর্থন দেওয়া। উল্টো চাপিয়ে রাখা হচ্ছে। এ কারণে অনেক শিল্পী দেশত্যাগ করেন।’ তবে পরবর্তীতে এই পোস্টটি তার সামাজিক মাধ্যম থেকে মুছে ফেলা হয়।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সাংস্কৃতিক জাগরণ না ঘটলে মানবিক সমাজ নির্মাণ সম্ভব নয়। বরাদ্দ বাড়লেও তা দিয়ে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় পাঠাগার, সংস্কৃতিকেন্দ্র, প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়া সম্ভব নয়। এই টাকায় সার্বিক সংস্কৃতিচর্চা ছড়িয়ে দেওয়া দুরূহ।’
বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে এই বরাদ্দকে ‘প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল’ হিসেবে উল্লেখ করে ক্ষোভ জানানো হচ্ছে।
সংস্কৃতিকর্মীদের প্রত্যাশা ছিল নতুন বাজেটে সংস্কৃতি যেন বিলাসিতা নয়, বরং জাতি গঠনের মৌলিক উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সেই আকাঙ্ক্ষা এবারও পূরণ না হওয়ায় হতাশা আরও ঘনীভূত হলো।