নির্মাতা রেদওয়ান রনির বিরুদ্ধে পেশাগত হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং মিডিয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাজের সুযোগে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন নির্মাতা ও কনটেন্ট নির্মাতা শৌভ রহমান রনি। এ বিষয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন তিনি।
স্মারকলিপিতে শৌভ রহমান উল্লেখ করেন, তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে চলচ্চিত্র, চিত্রনাট্য ও অডিও ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে কাজ করছেন। ২০১১ সালে রেদওয়ান রনির সহকারী হিসেবে কাজ করার সময় থেকেই ব্যক্তিগত বিরাগের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি। বর্তমানে রেদওয়ান রনি প্রথম আলোর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় তার প্রভাব ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে তাকে বঞ্চিত করছেন বলেও অভিযোগ করেন শৌভ।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি প্রথম আলো ও চরকির অফিসে পুরনো ভুল বোঝাবুঝি মেটাতে তিনি তার বাবা এবং স্কুলবন্ধু কাজী মাহমুদুল হাসান শুভকে নিয়ে যান। রেদওয়ান রনি নিজেই তাদের আমন্ত্রণ জানালেও অফিসে পৌঁছে আচরণে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। প্রায় তিন ঘণ্টা মানসিক চাপে রাখা হয় এবং অশোভন মন্তব্য ও মিথ্যা মামলার ভয় দেখানো হয়। শৌভ রহমানের দাবি, প্রবীণ পিতার উপস্থিতিতেও এ ধরনের রূঢ় আচরণ একটি সুপরিকল্পিত অপমান ও হুমকি।
তিনি অভিযোগ করেন, রেদওয়ান রনি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নিজেকে মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতির মুখোশে মুড়ে মুজিব কোট পরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, এমনকি ভারতীয় (কলকাতা) মিডিয়া পার্টিতেও ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পূর্ব মুহূর্তে তিনি আচরণে পাল্টে নেন এবং এখন বাস্তবতা হলো- সুযোগসন্ধানী রেদওয়ান রনি নিজের খোলস বদলিয়েছেন। প্রয়োজন অনুযায়ী অবস্থান বদলানো তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
একজন স্বাধীন নির্মাতার পেশাগত জীবনকে প্রভাবশালী ব্যক্তি দ্বারা জিম্মি করে রাখার ঘটনা ব্যক্তিগত বিরোধ নয়, বরং মিডিয়া জগতে ব্যক্তি-ভিত্তিক সিন্ডিকেটের উদাহরণ বলে মনে করেন তিনি।
এ ঘটনায় তিন দফা দাবি জানিয়ে শৌভ রহমান জেলা প্রশাসকের কাছে নিরপেক্ষ তদন্ত, পেশাগত মর্যাদা ও কাজের সুযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপ এবং মিডিয়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নীতিগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সেই স্মারকলিপিটি রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসেছে। অভিযোগের বিষয়ে শৌভ রহমান রনি গণমাধ্যমকে আরও বলেন, ‘রেদওয়ান রনি তার প্রভাব ব্যবহার করে এত বছর ধরে শুধু আমারই নন, আরও অনেককেই অনেক কাজ থেকে বঞ্চিত করেছেন। শেখ হাসিনার সময়েও, এমনকী হাসিনা পালানোর পরেও তিনি তার প্রভাব দেখিয়ে যাচ্ছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রী নাকি তার কথাতে চলেন, তার কিছুই হবে না; এরকম কথা বলতে থাকেন। এখন আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আগে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। শিগগির এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন ও ফেসবুক লাইভে বিস্তারিত জানাবো, এরপর হয়তো মামলা করব।’
রেদওয়ান রনি দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, 'আনুষ্ঠানিকভাবে আমি কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি, আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিষয়ে যদি আমার কাছে বা আমার প্রতিষ্ঠানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তখন এগুলো নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়া যাবে। প্রসঙ্গক্রমে জানিয়ে রাখি, চরকিতে যে কোনো নির্মাতা গল্প জমা দিতে পারেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে কনটেন্ট টিম তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় গল্প নির্বাচন বা বাতিল করেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ক অভিযোগ চরকির অফিসিয়াল মাধ্যমে জানাতে পারেন যে কেউ।'
এদিকে, নির্মাতা আহমেদ ইশতিয়াক হিমেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘রেদওয়ান রনি আমলনামা’ শিরোনামে একটি দীর্ঘ পোস্টে রনির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেন, ২০০৯ সালে রনির নাটকের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সময় ১১ মাস বিনা বেতনে কাজ করার পরেও প্রাপ্য অর্থ পাননি।
এছাড়া নিজের নির্মিত একটি নাটক প্রচার ঠেকাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগও করেন তিনি। হিমেলের দাবি, ঘটনার পর পুলিশের দ্বারস্থ হলেও কোনো প্রতিকার পাননি এবং রনির প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিন মিডিয়ায় কাজ করতে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন