বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বীকৃতি পাওয়ার অন্যতম প্রতীক হলো ‘ব্লু টিক’। ফেসবুকের প্রোফাইল কিংবা পেজের পাশে থাকা এই ছোট্ট নীল চিহ্নটি দেখে বোঝা যায় যে, এটি একটি অফিসিয়ালি যাচাইকৃত (verified) অ্যাকাউন্ট। ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড, মিডিয়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব সবার কাছেই ব্লু টিক একটি সম্মানের বিষয়।
কিন্তু ফেসবুকের কাছ থেকে এই ভেরিফাইড ব্যাজ পাওয়ার প্রক্রিয়াটি কীভাবে কাজ করে? কাদের দেওয়া হয় এই ব্যাজ? আর কী কী তথ্য জমা দিতে হয়?
ব্লু টিক আসলে কী এবং কেন জরুরি
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বীকৃতি পাওয়ার অন্যতম প্রতীক হলো ‘ব্লু টিক’। ফেসবুকের প্রোফাইল কিংবা পেজের পাশে থাকা এই ছোট্ট নীল চিহ্নটি দেখে বোঝা যায় যে, এটি একটি অফিসিয়ালি যাচাইকৃত (verified) অ্যাকাউন্ট। ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড, মিডিয়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব সবার কাছেই ব্লু টিক একটি সম্মানের বিষয়।
কিন্তু ফেসবুকের কাছ থেকে এই ভেরিফাইড ব্যাজ পাওয়ার প্রক্রিয়াটি কীভাবে কাজ করে? কাদের দেওয়া হয় এই ব্যাজ? আর কী কী তথ্য জমা দিতে হয়?
ব্লু টিক আসলে কী এবং কেন জরুরি
কাদের জন্য প্রযোজ্য
আবেদন করার পূর্বশর্ত
- ধাপে ধাপে আবেদন প্রক্রিয়া
- ফেসবুক কাদের আবেদন গ্রহণ করে
- আবেদন নাকচ হওয়ার কারণ
ও কিছু টিপস যেগুলো অনুসরণ করলে আবেদন গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়ে
ব্লু টিক বা ভেরিফাইড ব্যাজ কী?
ফেসবুকের ব্লু টিক হলো এমন একটি ব্যাজ, যা নির্দেশ করে যে ওই প্রোফাইল বা পেজটি একটি ‘official’ ও ‘authentic’ উৎস। এটি ফেসবুকের নিজস্ব যাচাইয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয় এবং সাধারণত পাবলিক ফিগার, সাংবাদিক, সরকারি প্রতিনিধি, ব্র্যান্ড বা মিডিয়া প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়ে থাকে।
এই ব্যাজটি সাহায্য করে:
- অনুসারীদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করতে
- ভুয়া বা ক্লোন অ্যাকাউন্ট থেকে ভিন্নতা প্রমাণে
- অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পারসোনাল ব্র্যান্ডিং বাড়াতে
- বুস্টেড কনটেন্ট ও বিজ্ঞাপনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে
ব্লু টিক কারা পেতে পারেন?
ফেসবুক সাধারণত নিচের শ্রেণীর ব্যক্তিদের জন্য ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া চালু রেখেছে:
পাবলিক ফিগার: অভিনেতা, খেলোয়াড়, লেখক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ইত্যাদি
ব্র্যান্ড বা কোম্পানি: কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা সরকারি সংস্থা
মিডিয়া: সংবাদমাধ্যম, টিভি চ্যানেল, অনলাইন পোর্টাল
সংগঠন: এনজিও, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও ইনফ্লুয়েন্সার: যারা ফেসবুকে নিয়মিত ভিজিটর পাচ্ছেন এবং অন্য মিডিয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিচিতি আছে
ফেসবুক ভেরিফিকেশনের প্রাথমিক শর্ত
ভেরিফাইড ব্যাজ পাওয়ার আগে কিছু মৌলিক শর্ত পূরণ করতে হবে:
- আসল হতে হবে (Authenticity): অ্যাকাউন্ট বা পেজটি একজন বাস্তব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে।
- পূর্ণতা (Completeness): অ্যাকাউন্টে প্রোফাইল ছবি, কাভার ফটো, বায়ো, ঠিকানা, ফোন নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য পূর্ণ থাকতে হবে।
- সক্রিয়তা (Activity): নিয়মিত পোস্ট দিতে হবে এবং engagement থাকতে হবে।
- উল্লেখযোগ্যতা (Notability): আপনার সম্পর্কে অনলাইন বা সংবাদ মাধ্যমে উল্লেখ থাকতে হবে।
- নিরাপত্তা (Security): two-factor authentication চালু থাকতে হবে।
ধাপে ধাপে ভেরিফিকেশন আবেদন করার পদ্ধতি
আবেদন ফর্মে প্রবেশ
প্রথমেই নিচের লিংকে যান: https://www.facebook.com/help/contact/342509036134712
এই ফর্মটি ফেসবুকের অফিসিয়াল ‘Request a Verified Badge’ পেইজ।
অ্যাকাউন্ট টাইপ নির্বাচন করুন
- আপনার অ্যাকাউন্টটি যদি ব্যক্তিগত প্রোফাইল, তবে সেটি নির্বাচন করুন।
- যদি বিজনেস পেজ হয়, তবে সেখান থেকে পেজটি সিলেক্ট করুন।
- পরিচয় নিশ্চিতকরণ নথি আপলোড করুন
ব্যক্তিগত প্রোফাইলের ক্ষেত্রে:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- পাসপোর্ট
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
পেজ বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে:
- ট্যাক্স ফাইল (TIN/VAT)
- বিজনেস লাইসেন্স
- সংস্থার চার্টার/প্রতিষ্ঠার দলিল
ক্যাটাগরি ও দেশ নির্বাচন করুন
যে বিষয়ে আপনি কাজ করেন (যেমন সাংবাদিকতা, শিক্ষা, মিডিয়া, ব্যবসা ইত্যাদি) সেই ক্যাটাগরি নির্বাচন করুন। পাশাপাশি দেশ নির্বাচন করুন।
আপনার প্রোফাইল কেন ভেরিফাই করতে চান তা লিখুন
এখানে ফেসবুক জানতে চায় আপনার অ্যাকাউন্ট বা পেজটি কেন উল্লেখযোগ্য? সংক্ষেপে লিখুন, আপনার অনলাইন উপস্থিতি, মিডিয়া কাভারেজ ও ভুয়া অ্যাকাউন্ট থাকলে সে বিষয় উল্লেখ করুন।
অনলাইন উপস্থিতির প্রমাণ দিন
এখানে আপনি ওয়েবসাইট, নিউজ লিংক, ব্লগ, ইউটিউব চ্যানেল, কিংবা অনলাইন কভারেজের ইউআরএল দিতে পারেন যেখানে আপনাকে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদন সাবমিট করুন এবং অপেক্ষা করুন
সব তথ্য দেওয়ার পর, “Send” বা “Submit” বাটনে ক্লিক করুন। এরপর ফেসবুক আপনার আবেদন পর্যালোচনা করবে। এটি সাধারণত ৭ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ করে জানিয়ে দেয়।
যেসব কারণে আবেদন নাকচ হতে পারে
- ভুয়া বা অসম্পূর্ণ তথ্য
- প্রোফাইল/পেজ নতুন অথবা অ্যাক্টিভ না
- উল্লেখযোগ্যতা প্রমাণ করতে না পারা
- নিরাপত্তা সেটিংস যথাযথ না থাকা
- তথ্য আপডেট না থাকা
টিপস: যেভাবে ব্লু টিক পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াবেন
- আপনার নাম ও প্রোফাইল পিকচার পরিচিতিমূলক রাখুন
- নিয়মিত তথ্যবহুল, মৌলিক ও নির্ভরযোগ্য কনটেন্ট শেয়ার করুন
- ফলোয়ার বৃদ্ধি করুন, একটিভিটি বাড়ান
- আপনার কাজ নিয়ে অনলাইন নিউজ বা মিডিয়া কাভারেজ থাকলে তা লিংক দিন
- অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় (যেমন ইনস্টাগ্রাম, টুইটার) একই নাম দিয়ে ভেরিফাই করুন
ব্লু টিক পাওয়ার পর সুবিধা কী?
- অ্যাকাউন্টে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে
- ভুয়া অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে
- স্পন্সর কনটেন্টে প্রাধান্য পায়
- গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে অ্যাকাউন্ট সহজে খুঁজে পাওয়া যায়
- ব্র্যান্ডিং ও পার্সোনাল মার্কেটিংয়ে সহায়তা করে
ফেসবুকের ব্লু টিক পাওয়ার জন্য ধৈর্য, নিয়মিত একটিভিটি ও যথাযথ ডকুমেন্টেশন জরুরি। আপনি যদি সত্যিই একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি বা ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেন, তবে সময়মতো আবেদন করে ফেসবুকের এই স্বীকৃতি অর্জন করতে পারবেন। মনে রাখবেন, এটি শুধুমাত্র একটি ব্যাজ নয় এটি আপনার অনলাইন উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতার পরিচয়।