ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

৩১১ দিন মহাকাশে আটকে ছিলেন ক্রিকালেভ

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৫, ০৯:২৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

তখন ১৯৯১ সালের মে মাস। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে উৎক্ষেপিত সয়ুজ মহাকাশযান এমআইআর স্টেশনে রুটিন মেইনটেন্যান্সের জন্য মহাকাশে পাড়ি দেন সের্গেই ক্রিকালেভ। এই যাত্রা পাঁচ মাসের জন্য মহাকাশে ছিল। কিন্তু যাত্রা পথেই ঘটে ইতিহাসের এক বিপর্যয়। কারণ তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গিয়ে গঠিত হয় ‘রাশিয়ান ফেডারেশন’, এবং ক্রিকালেভ হয়ে ওঠেন সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ নাগরিক।

একদিকে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্যদিকে মহাকাশে আটকা পড়া তিনি। এরফলে পৃথিবীর সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায়।

ক্রমেই খাবার ও অক্সিজেন সংকটের পড়েন তিনি। প্রতিদিন ১৬ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতেন ক্রিকালেভের, তবে পৃথিবী থেকে কোনো উত্তর আসতো না। এসব কারণে ক্রমেই হতাশায় ভুগতে থাকেন তিনি। মানসিকভাবে ভেঙেও পড়েন।

এছাড়া প্রতিদিন রেডিওতে সিগন্যাল পাঠিয়ে অপেক্ষা করতেন, কিন্তু কোনো উত্তর আসতো না। মাসের পর মাস কেটে যায়, অবশেষে একদিন তিনি পেলেন একটি রেডিও বার্তা, যেখানে বলা হয়েছিল, আপনার মিশনের জন্য এখন আর কেউ দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। যতদিন না নতুন করে কেউ যোগাযোগ করে আপনি মহাকাশেই থাকুন।’

প্রায় ৩১১ দিন পর ১৯৯২ সালের ২৫ মার্চে অবশেষে পৃথিবী থেকে ক্রিকালেভের কাছে সাড়া আসে। এটি ছিল তার জীবনের এক নতুন দিগন্ত। যে সময় তার শরীর ও মন ভেঙে পড়েছিল। মনে হয়েছিল যে বেঁচে থাকা একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি বেঁচে থাকেন এবং পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

মহাকাশচারী ক্রিকালেভের এই কাহিনী কেবল একটি ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্প নয়, এটি মানবিক শক্তি, ধৈর্য এবং জীবনের প্রতি গভীর ভালোবাসার গল্প। মহাকাশে প্রায় এক বছর একা কাটানোর পর, ক্রিকালেভ পৃথিবীতে ফিরে আসেন, কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বদলে দেয়।

তিনি ২০০০ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে প্রথম অভিযানের সদস্য হিসেবে অংশ নেন। এর মাধ্যমে ক্রিকালেভের প্রমাণ করেন যে, মহাকাশের বিপদসংকুল পরিবেশে টিকে থাকা এবং আবার ফিরে আসা সম্ভব, যদি মনোবল দৃঢ় থাকে।