জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের পাশাপাশি বিদেশে সেকেন্ড সিটিজেনশিপ বা দ্বিতীয় নাগরিকত্বের প্রতি আগ্রহী অনেকেই। এর জন্য দীর্ঘদিন দেশটিতে বসবাসের পর রেসিডেন্সি বা সিটিজেনশিপের জন্য আবেদনও করে অনেকে। তবে তাতেও ব্যর্থ হন অনেকে।
এজন্য ভিনদেশি মানুষকে বিয়ে করেন নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায়। বিশ্বের এমন কিছু দেশ রয়েছে, যেসব দেশের নাগরিককে বিয়ে করলে বৈধ উপায়ে সেই দেশের নাগরিকত্ব লাভ করা যায়। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নোম্যাড ক্যাপিটালিস্ট। এ বিষয়ে তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
কেপ ভার্ড:
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরা পশ্চিম আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র কেপ ভার্ড। দেশটির নাগরিককে বিয়ে করলে সেই দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই দেশটির নাগরিককে বৈধভাবে বিয়ে করতে হবে। নাগরিকত্ব লাভের জন্য কেপ ভার্ডে বসবাসের কোনো পূর্বশর্ত নেই। ফলে এ দেশের নাগরিকদের বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভ সহজ ও সময় সাশ্রয়ী।
স্পেন:
দক্ষিণ ইউরোপের বৃহৎ দেশ স্পেন। দেশটির আইনে বলা আছে, কেউ স্প্যানিশ নাগরিক বিয়ে করার পর একসঙ্গে এক বছর বসবাস করলেই স্পেনের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। দেশটির নাগরিকত্ব একবার পেলে পাশাপাশি লাতিন আমেরিকা, পর্তুগাল, ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশের দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা পাওয়া যায়। এ জন্য স্প্যানিশ নাগরিককে বিয়ের বৈধ সনদ ও একসঙ্গে বসবাসের প্রমাণাদি লাগে। কখনো কখনো স্প্যানিশ ভাষায় প্রাথমিক দক্ষতা এবং দেশটির সংস্কৃতি সম্যক ধারণা কাজে লাগে।
কলম্বিয়া:
লাতিন আমেরিকার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ কলম্বিয়া। দেশটিতে অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। অনেকেরই বিশ্বাস, কলম্বিয়া হচ্ছে আমেরিকার লুকানো রত্ন। সাধারণত দেশটিতে নাগরিকত্বের জন্য পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দেশটির নাগরিক বিয়ে করলে এই সময় মাত্র দুই বছরে এসে দাঁড়ায়। এ জন্য স্প্যানিশ ভাষায় অনুষ্ঠিত নাগরিকত্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণের প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়া আপনি অন্য কোনো লাতিন দেশের হলে মাত্র এক বছরে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আর্জেন্টিনা:
ফুটবলপ্রেমী মানুষদের কাছে খুবই পরিচিত এক নাম আর্জেন্টিনা। দেশটির কোনো নাগরিককে বিয়ে করলে সেখানে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি মিলে। বিয়ের দুই বছর পরই আর্জেন্টিনার নাগরিকত্ব অর্জনের আবেদন করা যায়। এ জন্য বিয়ের বৈধ কাগজপত্র এবং কোনো ধরনের অপরাধ না করার প্রমাণাদির প্রয়োজন হয়। অনেক সময় স্প্যানিশ ভাষার জ্ঞানও লাগে।
মেক্সিকো:
আপনি যদি মেক্সিকান কোনো নাগরিককে বিয়ে করে তার সঙ্গে দুই বছর বসবাস করেন, তাহলে দেশটির নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন বলে উল্লেখ রয়েছে মেক্সিকোর আইনে। এ জন্য আপনার স্প্যানিশ ভাষার দক্ষতা, বিয়ের বৈধ কাগজপত্র ও একসঙ্গে থাকার প্রমাণাদি লাগবে। এখানে ভালো সুবিধা হচ্ছে, আপনি মেক্সিকোর নাগরিকত্ব পেলেও আগের দেশের পাসপোর্ট সঙ্গে রাখতে পারবেন।
তুরস্ক:
অনেকের কাছেই তুরস্ক হচ্ছে স্বপ্নের দেশ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ঘেরা তুরস্কে বিয়ের পর তিন বছর একসঙ্গে থাকলে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। লাতিন আমেরিকা বা ইউরোপের তুলনায় তুরস্কের নাগরিকত্ব অর্জন অনেকটাই সহজ। এ দেশের নাগরিকত্বের জন্য ভাষা বা সংস্কৃতি জানার প্রয়োজন নেই। কেবল তিন বছর একসঙ্গে বসবাস করতে পারলেই দেশটির নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন। নাগরিকত্ব পেলে দেশটির পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের ১১০টিরও বেশি দেশে ভিসা ফ্রি বা অন অ্যারাইভাল সুবিধা পাবেন।
সুইজারল্যান্ড:
কঠোর অভিবাসন নীতির জন্য সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব লাভ খানিকটা জটিল। তবে দেশটির নাগরিককে বিয়ের মাধ্যমে বৈধভাবে নাগরিকত্ব লাভ করা যায়। আপনি যাকে বিয়ে করবেন তিনি যদি সুইস নাগরিক হয়ে থাকেন এবং আপনারা একসঙ্গে তিন বছর থাকেন, তাহলে পাঁচ বছর বসবাসের পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবার দেশের বাইরে থাকলেও দাম্পত্যজীবনের ছয় বছর অতিক্রম হলে সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। দেশটির নাগরিকত্ব অর্জন করলে ইউরোপে বসবাসের সুযোগ পাবেন। এ জন্য সুইস সমাজে মিশে যাওয়ার প্রমাণ যেমন- সুইজারল্যান্ডের ভাষা, সংস্কৃতিক সম্পর্কে জানা-শোনা, কোনো ধরনের অপরাধমূলক কাজে না জড়ানোর রেকর্ড ও বৈধ দাম্পত্য সম্পর্কের সনদ হলেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আপনার মতামত লিখুন :