ভালোবাসার মানুষের পাশে ঘুমানো মানসিক প্রশান্তি ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সময় প্রিয়জনের সংস্পর্শে থাকলে শরীরে অক্সিটোসিন নামক ‘ভালোবাসার হরমোন’ নিঃসৃত হয়, যা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়।
এতে কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা হ্রাস পায়, ফলে ঘুমের গুণমান বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক স্বস্তি জাগে। পাশাপাশি হৃদস্পন্দনের হার স্বাভাবিক থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা হার্টের জন্য উপকারী। জোড়া ঘুম শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়ক।
ভালোবাসার মানুষটির উষ্ণতা ও নিঃশ্বাসের ছন্দ ঘুমের মধ্যে একধরনের নিরাপত্তার অনুভূতি সৃষ্টি করে, যা গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুমে সহায়তা করে। নিয়মিত এমন ঘুম সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, একে অন্যের প্রতি আস্থা বাড়ায় এবং সম্পর্কের বন্ধন মজবুত করে তোলে।
এমনকি দাম্পত্য জীবনে সংহতি ও তৃপ্তির অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। তাই, প্রিয়জনের পাশে ঘুমানো শুধু ঘনিষ্ঠতার প্রকাশ নয়, এটি একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাসও বটে, যা শরীর ও মন উভয়ের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, এমন ঘুমের ৭টি দারুণ উপকারিতা—
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে
ভালোবাসার মানুষের স্পর্শ, নিঃশ্বাসের ছন্দ এবং দেহের উষ্ণতা মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ বাড়ায়, যা ‘লাভ হরমোন’ নামে পরিচিত। এটি মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হতাশা কমাতে সাহায্য করে, এবং একটি প্রশান্ত ঘুম নিশ্চিত করে।
ঘুমের গুণগত মান উন্নত হয়
গবেষণায় দেখা গেছে, একা ঘুমানোর তুলনায় প্রিয়জনের পাশে ঘুমালে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া ও গভীর ঘুমে পৌঁছানো সহজ হয়। কারণ, আমরা নিরাপদ ও আরামবোধ করি, যা ঘুমের গুণগত মান উন্নত করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমে
পাশে ভালোবাসার মানুষ থাকলে হৃদস্পন্দনের হার স্বাভাবিক থাকে এবং মানসিক প্রশান্তি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হৃদরোগের সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
সম্পর্ক আরও গভীর হয়
রাতভর একে অপরের পাশে থাকা মানেই শুধু ঘুম নয়, বরং এটি একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, নির্ভরতা এবং ভালোবাসা বাড়ায়। সম্পর্কের মধ্যকার অদৃশ্য বন্ধন আরও মজবুত হয়।
শারীরিক সংযোগ বাড়ে
সান্নিধ্য, ছোঁয়া এবং স্পর্শ—এসবের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয় একধরনের গভীর শারীরিক-আত্মিক সংযোগ। ফলে দুজনের মাঝে যৌনতা নয়, বরং শারীরিক আরাম ও মানসিক ঘনিষ্ঠতা আরও সহজভাবে গড়ে ওঠে।
দুঃস্বপ্ন কমে যায়
অনেকেই একা ঘুমানোর সময় দুঃস্বপ্ন, ঘুম ভেঙে যাওয়া বা আতঙ্কে ভোগেন। কিন্তু পাশে প্রিয় মুখটি থাকলে মনে হয় ‘আমি একা নই।’ এটি মনকে আশ্বস্ত করে এবং ঘুমকে করে শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছন্দ।
সকালের শুরুটা হয় মধুর
একসঙ্গে ঘুমিয়ে একসঙ্গে জেগে ওঠা, এর চেয়ে সুন্দর দিন শুরু আর কী হতে পারে? সকালবেলার চোখ খোলার সময় প্রিয়জনকে পাশে পাওয়া মানেই একটা ইতিবাচক ও ভালোবাসাময় দিন শুরু।
ভালোবাসার মানুষের পাশে ঘুমানো কোনো বিলাসিতা নয়, এটি এক ধরনের মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসা। এটি সম্পর্ককে শুধু শক্তিশালী করে না, বরং দুজন মানুষের মধ্যে একধরনের গভীর বোঝাপড়া, নির্ভরতা ও স্নেহ তৈরি করে। সুতরাং, পরবর্তীবার যখন আপনি ক্লান্তিতে বিছানায় যাবেন, পাশে প্রিয় মানুষটিকে পেলে শুধু ঘুম নয়, সারারাত জুড়ে আপনিও পাবেন এক প্রশান্তি, যা জাগতিক সব ব্যস্ততার ঊর্ধ্বে।
আপনার মতামত লিখুন :