অফিস এখন শুধু কাজের জায়গা নয়, অনেকের জীবনের একটি বড় অংশ। দিনের বড় একটি সময় আমরা কাটাই সহকর্মীদের সঙ্গে।
একসঙ্গে কাজ করি, বিরতি নিই, হাসি-কান্না ভাগাভাগি করি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অনেক সময় এই সহানুভূতি বা বন্ধুত্ব রূপ নেয় ঘনিষ্ঠতায়, এমনকি রোমান্টিক সম্পর্কে।
যদিও সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমে জড়ানো একেবারে অস্বাভাবিক কিছু নয়, তবে এর পেছনে কিছু বাস্তবতা রয়েছে, যা এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়।
একটি সুন্দর সম্পর্ক যেমন ব্যক্তিগত জীবনে সুখ আনতে পারে, তেমনি কিছু ভুল সিদ্ধান্ত পেশাগত জীবনকেও কঠিন করে তুলতে পারে।
তাই প্রেমের আগে ভাবুন পেশার কথাও। জেনে নিন, অফিস প্রেমে জড়ানোর আগে কী কী বিষয় মাথায় রাখা সবচেয়ে জরুরি।
প্রথমেই জেনে নিন অফিস নীতিমালা কী বলে
বেশির ভাগ করপোরেট প্রতিষ্ঠানেই সহকর্মীদের মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ক নিয়ে স্পষ্ট নীতিমালা থাকে। কিছু অফিসে এমন সম্পর্ক নিরুৎসাহিত করা হয়।
আবার কোথাও সম্পর্ক গোপন না রেখে মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগকে জানানো বাধ্যতামূলক। নিয়ম না মানলে তা পেশাগত জীবনে জটিলতা তৈরি করতে পারে।
সম্পর্কের প্রধান ভিত্তি সম্মতি
রোমান্টিক সম্পর্ক পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হওয়া উচিত। একতরফা আগ্রহ বা বারবার অযাচিত মনোযোগ কোনো পর্যায়ে গিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগের জন্ম দিতে পারে, যা কর্মস্থলের জন্য ভয়ানক পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
পেশাদার পরিবেশ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়
অফিসে প্রেম থাকলেও তা যেন কর্মপরিবেশকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত না করে, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। বিশেষ করে সহকর্মীদের কাছে যদি সম্পর্ক নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে, তাহলে শুধু সম্পর্ক নয়, পুরো টিমের মনোবলেই প্রভাব পড়তে পারে।
ভবিষ্যতের বিষয়েও ভাবতে হবে
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, অফিসে শুরু হওয়া সম্পর্ক ভেঙে গেলে তা কর্মক্ষেত্রে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। একসঙ্গে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সম্পর্ক শুরু করার আগে পরিণতি সম্পর্কেও সচেতন থাকা দরকার।
ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের সীমারেখা নির্ধারণ করুন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- নিজের পেশাদারিত্ব বজায় রাখা। সম্পর্ক থাকলেও যেন তা দায়িত্ব পালনে বাধা না দেয়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। অফিসের পরিবেশে একটি স্পষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করাই হবে বিচক্ষণতার পরিচায়ক।
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে যা করতে হবে
যদি সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে কিছু কৌশল অনুসরণ করলে সম্পর্ক ও ক্যারিয়ার—দুটোই সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
১. অফিসে সম্পর্ক গোপন না রেখে সীমিত পরিসরে জানান
সম্পর্ক গোপন রাখার চেষ্টা করলে গুজব ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সহকর্মীরা সময়ের ব্যবধানে এমনিতেই জানতে পারবেন, তাই আগে থেকেই বিষয়টি শালীনভাবে জানিয়ে দেওয়া ভালো।
২. অফিসের নিয়ম মেনে চলুন
মার্কিন ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ ভিকি সালেমির মতে, যদি বুঝতে পারেন, সম্পর্কের কারণে আপনাদের একজনকে অন্য অফিসে বদলি করা হতে পারে বা এইচআরকে জানাতে হতে পারে তাহলে বিষয়টি আরেকটু গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই সম্পর্কটি আদৌ ঝুঁকি নেওয়ার মতো কি না।
৩. ব্যক্তিগত বিষয় অফিসে না টানা
অফিসে ব্যক্তিগত আলোচনা এড়িয়ে চলুন। দায়িত্ব পালনে মনোযোগী থাকুন। পেশাদার আচরণ শুধু ক্যারিয়ার নয়, সম্পর্কের ভবিষ্যতের জন্যও সহায়ক।
অফিসে প্রেম একেবারে নিষিদ্ধ নয়, তবে এতে পেশাগত জটিলতা আসতে পারে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। যদি সম্পর্ক গড়ে ওঠেও, তা যেন আপনার কাজ, সহকর্মী এবং নিজের মর্যাদার ক্ষতি না করে, সেটিই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
আপনার মতামত লিখুন :