বিষণ্ণতার চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ মৃত্যুঝুঁকি বাড়াতে পারে—এমন সতর্কতা উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। গবেষণা বলছে, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বিষণ্ণতায় ভুগছেন এবং যাদের বয়স ২৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে, তাদের মধ্যে বিশেষ করে অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ ব্যবহারকারীদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের রুটগার্স ইউনিভার্সিটি ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে পরিচালিত এই গবেষণাটি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল প্লস ওয়ান-এ প্রকাশিত হয়েছে।
এতে ২০০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে চিকিৎসাধীন থাকা ৩৯ হাজারেরও বেশি মেডিকেইড রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
কী পাওয়া গেছে গবেষণায়?
গবেষকেরা রোগীদের দুটি দলে ভাগ করেন। একদল রোগী তাদের মূল অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের সঙ্গে আরেকটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট যুক্ত করেন।
অন্যদল একই অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টের সঙ্গে একটি নতুন ধরনের অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ—যেমন অ্যারিপিপ্রাজল (অ্যাবিলিফাই), কুয়েটিয়াপিন (সেরোকেল) বা ওলানজাপিন (জাইপ্রেক্সা)—গ্রহণ করেন।
গবেষণায় দেখা যায়, দ্বিতীয় দলের অর্থাৎ অ্যান্টিসাইকোটিক গ্রহণকারীদের মৃত্যুঝুঁকি প্রথম দলের তুলনায় প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি। সহজভাবে বলা যায়, যারা এক বছর ধরে অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রতি ২৬৫ জনে ১ জনের মৃত্যু হতে পারে—যা অতিরিক্ত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রহণকারীদের মধ্যে দেখা যায়নি।
কেন বাড়ছে ঝুঁকি?
গবেষকরা জানান, অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ অনেক সময় ওজন বৃদ্ধি, রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি ও কোলেস্টেরলের সমস্যা তৈরি করে। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই মৃত্যুঝুঁকি বাড়াতে পারে।
তারা আরও বলেন, এ ধরনের ওষুধ অনেক সময় চিকিৎসকেরা যথাযথ পর্যবেক্ষণ ছাড়াই দ্রুত প্রেসক্রাইব করেন। অথচ ক্লিনিক্যাল নির্দেশিকায় বলা আছে, একটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট কমপক্ষে চার থেকে ছয় সপ্তাহ ব্যবহার করে ফল না পেলে তবেই নতুন ওষুধ যুক্ত করার কথা।
আগের গবেষণাগুলোয় ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়—এমন প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। তবে নতুন গবেষণা বলছে, এ ঝুঁকি শুধু বয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তরুণ ও মধ্যবয়সী বিষণ্ণ রোগীদের মধ্যেও একইরকম হতে পারে।
কী করা উচিত?
গবেষকরা মনে করছেন, বিষণ্ণতার চিকিৎসায় অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ ব্যবহারে চিকিৎসক ও রোগী উভয়কে আরও সচেতন হওয়া জরুরি। এ ধরনের ওষুধ কেবল তখনই ব্যবহার করা উচিত, যখন অন্যান্য নিরাপদ ও বিকল্প পদ্ধতি কাজে না আসে।
রোগীদের প্রতি পরামর্শ হলো, নিজের চিকিৎসা নিয়ে প্রশ্ন করতে ভয় না পাওয়া, ওষুধের ঝুঁকি সম্পর্কে জানানো এবং সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া।





সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন