শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৫, ০১:২৪ এএম

কেন খাবেন হাঁসের মাংস, জানুন গোপন রহস্য

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৫, ০১:২৪ এএম

হাঁসের মাংস। ছবি- সংগৃহীত

হাঁসের মাংস। ছবি- সংগৃহীত

সাধারণত হেমন্তের হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করলেই বাঙালির রান্নাঘরে উঁকি দেয় কিছু বিশেষ পদের আয়োজন। কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল বা অলস দুপুরে গরম ভাতের সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা হাঁসের মাংসের কষা ভুনা- এই চিত্রটি গ্রামবাংলা থেকে শহুরে জীবন পর্যন্ত এক চিরচেনা ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। মুরগি বা গরুর মাংসের মতো নিত্যদিনের খাবার না হলেও, হাঁসের মাংসের রয়েছে এক স্বতন্ত্র আবেদন ও কদর, যা এটিকে সাধারণ ভোজের ঊর্ধ্বে এক বিশেষ অভিজ্ঞতায় পরিণত করেছে।

ঐতিহ্যগতভাবে শীতকালে হাঁসের মাংস খাওয়ার প্রধান কারণ ছিল এর প্রাকৃতিক প্রাপ্যতা। এ সময় হাওর-বাঁওড় ও বিলের পানি কমে আসায় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা দেশি হাঁসগুলো ধরা সহজ হতো এবং এগুলো চর্বিযুক্ত হয়ে ওঠায় স্বাদেও অনন্য হতো।

কিন্তু বর্তমানে এই চিত্র পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে বাণিজ্যিক হাঁসের খামার। ঋতুকালীন এই বিশেষ খাবারটি এখন আর কেবল শীতের অপেক্ষায় সীমাবদ্ধ নেই। অর্থাৎ এই রসনাবিলাস এখন আর মৌসুমি আবেশে আবদ্ধ নেই, বরং ব্যাপ্তি ছড়িয়েছে বছরজুড়ে।

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অনুষঙ্গ

বাঙালি সংস্কৃতিতে হাঁসের মাংস কেবল একটি খাবার নয়, এটি উৎসব, অতিথি আপ্যায়ন এবং ঋতুকালীন উদযাপনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশেষ করে শীতকালে যখন খাল-বিল ও হাওরের পানিতে চরে বেড়ানো দেশি হাঁসগুলো হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে, তখনই এর চাহিদা বেড়ে যায়।

নতুন জামাইকে আপ্যায়ন, পৌষ সংক্রান্তি বা পারিবারিক মিলনমেলায় হাঁসের মাংসের উপস্থিতি যেন উৎসবের আমেজকে পূর্ণতা দেয়। চালের রুটি, চিতই পিঠা কিংবা গরম খিচুড়ির সঙ্গে এর যুগলবন্দী এক কথায় অতুলনীয়। এর সমৃদ্ধ, গাঢ় স্বাদ এবং চর্বিযুক্ত গঠন এটিকে অন্য সব মাংস থেকে আলাদা করে তুলেছে। 

১. বাণিজ্যিক খামার ও স্থিতিশীল জোগান: দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে, হাঁসের খামার একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। উন্নত জাত, যেমন পেকিন, মাস্কোভি বা খাকি ক্যাম্পবেল, মাংস উৎপাদনের জন্য বিশেষভাবে পালন করা হয়। এই খামারগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাঁস পালন করায় সারা বছর বাজারে এর জোগান স্থিতিশীল থাকছে। ফলে ক্রেতা বা রেস্তোরাঁ মালিকদের এখন আর শীতের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।

হাঁসের মাংস। ছবি- সংগৃহীত

২. শহুরে খাদ্যাভ্যাস ও রেস্তোরাঁর ভূমিকা: শহুরে জীবনে রেস্তোরাঁ সংস্কৃতি প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে হাঁসের মাংসের চাহিদা বেড়েছে। অনেক রেস্তোরাঁর মেন্যুতে এখন ‘হাঁসের ভুনা’, ‘হাঁসের রোস্ট’ বা ‘চালের রুটির সঙ্গে হাঁস’ একটি স্থায়ী পদে পরিণত হয়েছে। রেস্তোরাঁগুলো যেহেতু সারা বছর তাদের গ্রাহকদের একই মেন্যু সরবরাহ করতে চায়, তাই তারা খামারগুলোর ওপর নির্ভরশীল। এটি হাঁসের মাংসকে একটি মৌসুমি খাবার থেকে নিত্যদিনের খাবারে রূপান্তরিত করতে বড় ভূমিকা রাখছে।

৩. সহজলভ্যতা ও ভোক্তার রুচি: আগে হাঁসের মাংসের জন্য গ্রামের বাজার বা নির্দিষ্ট কোনো বিক্রেতার ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন দেশের প্রায় সব সুপারশপ, বড় কাঁচাবাজার এবং অনলাইন মাংস বিক্রির প্ল্যাটফর্মে সারা বছরই প্রক্রিয়াজাত করা হাঁসের মাংস পাওয়া যায়। এই সহজলভ্যতা সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। মানুষ এখন ইচ্ছে হলেই হাঁসের মাংস কিনে খেতে পারছে, যার জন্য কোনো বিশেষ ঋতু বা উৎসবের প্রয়োজন হচ্ছে না।

পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যগত দিক

স্বাদের পাশাপাশি হাঁসের মাংস পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। এটি উচ্চমানের প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস, যা শরীরের পেশি গঠন ও কোষ মেরামতে সহায়তা করে। এছাড়া এতে রয়েছে আয়রন, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।

সেলেনিয়াম, জিঙ্ক এবং ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স (বিশেষ করে নিয়াসিন ও ভিটামিন বি-১২) এর মতো প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিনও এতে পাওয়া যায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সচল রাখতে ভূমিকা রাখে।

হাঁসের মাংস। ছবি- সংগৃহীত

তবে এর স্বাস্থ্যগত কিছু দিকও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। হাঁসের মাংসে, বিশেষ করে এর চামড়ায়, মুরগির মাংসের তুলনায় চর্বি ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য পরিমিত পরিমাণে এবং চামড়া ছাড়িয়ে খাওয়া শ্রেয়।

সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করলে এর চর্বির পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

প্রজাতি ও রান্নার কৌশল

বাংলাদেশে মূলত পাতিহাঁস ও চীনা হাঁসের মাংস বেশি প্রচলিত। পাতিহাঁসের মাংস তুলনামূলকভাবে বেশি তৈলাক্ত ও সুস্বাদু হয়, অন্যদিকে চীনা হাঁসের মাংসে চর্বির পরিমাণ কিছুটা কম।

হাঁসের মাংস রান্নার পদ্ধতি সাধারণ মাংসের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। এর মাংসপেশি তুলনামূলক শক্ত হওয়ায় এবং একটি নিজস্ব গন্ধ থাকায় এটি ভালোভাবে রান্না করা জরুরি। রান্নার আগে গরম পানিতে কিছুক্ষণ সেদ্ধ করে নিলে বা ভিনেগার/লেবুর রস দিয়ে মেখে রাখলে এর আঁশটে গন্ধ দূর হয় এবং মাংস নরম হয়।

জিরা, ধনে, আদা, রসুন, গরম মসলা (এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ) এবং প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কষিয়ে রান্না করাই এর প্রচলিত রীতি। এই দীর্ঘ কষানোর ফলেই মসলা মাংসের গভীরে প্রবেশ করে এবং এর চর্বি গলে মাংসের সঙ্গে মিশে এক অসাধারণ স্বাদ তৈরি করে।

আধুনিক রন্ধনশিল্পে হাঁসের মাংস

ঐতিহ্যবাহী ভুনা বা কষা পদের বাইরেও আধুনিক রন্ধনশিল্পে হাঁসের মাংসের ব্যবহার বাড়ছে। ফরাসি ‘ডাক কনফি’ বা চীনা ‘পিকিং ডাক’-এর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদের আদলে বাংলাদেশের রেস্তোরাঁগুলোতেও এখন হাঁসের মাংসের ফিউশন ডিশ তৈরি হচ্ছে। রোস্ট, স্টেক কিংবা স্লাইস করা হাঁসের মাংস দিয়ে তৈরি সালাদ খাদ্যরসিকদের কাছে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

হাঁসের মাংস বাঙালির রসনাবিলাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর সমৃদ্ধ স্বাদ, ঐতিহ্যগত তাৎপর্য এবং পুষ্টিগুণ এটিকে এক বিশেষ আসনে বসিয়েছে। সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করলে এবং পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে এটি কেবল স্বাদের তৃপ্তিই মেটায় না, বরং হয়ে ওঠে একটি পরিপূর্ণ ও স্বাস্থ্যকর অভিজ্ঞতা। তাই শীতের আগমনী বার্তায় হাঁসের মাংসের স্বাদ গ্রহণ যেন বাঙালির এক আদি ও অকৃত্রিম ভালো লাগার নাম।

Link copied!